পেশাদারি রূপচর্চার কোর্স করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ এখন অনেক বেশি
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে, "যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে"- আজকের একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিলগ্নে এসে দাঁড়িয়ে এই প্রবাদ যে কতখানি সত্য এবং যুক্তিযুক্ত তা বোধহয় কাউর কাছেই অবিদিত নয়। কারণ আজকের নারী অনেকবেশি স্বনির্ভর। জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ সবই তার নখদর্পনে। প্লেন চালানো থেকে শুরু করে গাড়ি ড্রাইভিং, ক্রিকেট থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, বড়ো বড়ো হোটেলের শেফ থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিস সর্বত্রই মেয়েদের অবাধ বিচরণ। আর কাজের ক্ষেত্রটি যদি হয় রূপচর্চা সম্পর্কিত সেক্ষেত্রে তো মেয়েদের জুড়ি মেলা ভার।সেই আদিকাল থেকেই রূপ চর্চায় মেয়েরা সিদ্ধহস্ত। আর ইদানীংকালে সেই রূপচর্চাই হয়ে উঠেছে পেশাগত দিক থেকে এক অভাবনীয় ক্ষেত্র। আর ঠিক সেই কারণেই বাড়ছে বিউটিশিয়ান কোর্সের চাহিদা। প্রফেশনাল ট্রেনিং নিয়ে মেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।
শুধু মেয়েরা নয় ছেলেরাও রূপচর্চাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে
তবে বর্তমানে যেহেতু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণাটি অনেকখানি সেকেলে হিসেবে পর্যবসিত তাই শুধু মেয়েরা নয় ছেলেরাও অত্যন্ত সাবলীল ভাবে রূপচর্চাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সৌন্দর্য সচেতন। নিজেদের ফিট রাখতে যেমন তারা যোগব্যায়াম করছে, জিম যাচ্ছে ঠিক তেমনি নিয়মিত বিউটি পার্লার যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। আর সেই ক্রমবর্ধমান চাহিদাই ছেলে মেয়েদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার ইচ্ছেটাকে প্রসারিত করছে।বিয়ের কোনে সাজানো থেকে শুরু করে ম্যানিকিওর, পেডিকিওর, ফেসিয়াল, হেয়ার ড্রেসিং সবকিছুর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হাতে কলমে।
বিউটিশিয়ান কোর্স - বেসিক ও অ্যাডভান্স
সাধারণভাবে দুটি ভাগে বিউটিশিয়ান কোর্সটি শেখানো হয়ে থাকে। প্রথমটি বেসিক লেভেল আর দ্বিতীয়টি হল অ্যাডভান্স লেভেল। সাধারণত বেসিক লেভেলে আইব্রো সেটিং, হেয়ার কাটিং, সাধারণ পার্টি মেকআপ, ম্যানিকিওর, পেডিকিওর, এমনকি ব্রাইডাল মেকআপ এর কিছু কিছু বিষয় শেখানো হয়। আর অ্যাডভান্স লেভেলে থাকে ব্রাইডাল মেকআপ এর যাবতীয় বিষয়, হেয়ার স্টাইলিং এর খুঁটিনাটি, স্কিন পরিচর্যার সাতকাহন ইত্যাদি সবকিছু। এমনকি কোন ফেস কাটিংএ কি ধরণের মেকআপ বা হেয়ারস্টাইল কার্যকরী সেই বিষয়টিও শেখানো হয় এই পর্যায়ে।
বিউটিশিয়ান কোর্সের মধ্যে বর্তমানে অ্যারোমা থেরাপি এবং বিভিন্ন ধরনের স্পা কোর্সের চাহিদা বাড়ছে। আসলে কর্মব্যস্ত জীবনে স্ট্রেস রিলিফ হিসেবে অ্যারোমা থেরাপি, স্পা এগুলো ভীষণ কার্যকরী।বিউটিশিয়ান কোর্সের মধ্যে বর্তমানে অ্যারোমা থেরাপি এবং বিভিন্ন ধরনের স্পা কোর্সের চাহিদা বাড়ছে। আসলে কর্মব্যস্ত জীবনে স্ট্রেস রিলিফ হিসেবে অ্যারোমা থেরাপি, স্পা এগুলো ভীষণ কার্যকরী। প্রফেশনাল বিউটিশিয়ানরা বিউটি থেরাপি থেকে শুরু করে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট সব ধরণের কাজে নিযুক্ত থাকেন।
হাতে কলমে প্রশিক্ষণ
যদিও এবিষয়ে প্রথাগত পড়াশোনা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সৌন্দর্যবোধ, রুচিবোধ এবং প্রশিক্ষণ থাকলেই বিউটিশিয়ান হিসেবে আপনার কেরিয়ার উজ্জ্বল হবে। তবে কসমেটোলজি, বিউটি থেরাপির মতো কোর্সগুলি শিখে সফলতা অর্জন করতে হলে ফিজিওলজি, অ্যানাটমির মতো বিষয় গুলিতে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা দরকার। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষিতরা বিশেষ সুবিধা পাবেন। অ্যাডভান্স কোর্স কিংবা কেমিকাল কোর্সগুলির ক্ষেত্রেও ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু প্রাকটিক্যাল বেসড তাই শিক্ষিত না হয়েও অনেকেই পেশদার বিউটিশিয়ান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলে ছেলে মেয়েরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে, নিদেনপক্ষে বেসিক কোর্স করেও নিজেদের পরিচয় তৈরি করছেন। অন্যকে সাজিয়ে তুলে নিজেকে করে তুলছেন আত্মবিশ্বাসী।
বর্তমানে একাধিক ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠান বিউটিশিয়ান কোর্সের সুযোগ দিচ্ছে। এসব জায়গা থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে প্রচুর ছেলেমেয়ে নিজেদের রোজগারের রাস্তা প্রশস্ত করছে। 'বিউটি এন্ড ওয়েলনেস' ট্রেনিং জগতে এরকমই কিছু প্রসিদ্ধ নাম হল ল্যাকমে একাডেমি, ভিএলসিসি, কেয়া শেঠ’স কলেজ অব বিউটি, শেহনাজ হুসেন বিউটি অ্যাকাডেমি, বি বনি অ্যাকাডেমি প্রভৃতি। এখানে শর্ট টার্ম, লং টার্ম এবং স্পেশালাইজড প্রফেশনাল কোর্সের মাধ্যমে মেকআপ, কসমেটোলজি, বিউটি থেরাপি, নেইল আর্ট, নেইল এক্সটেনশন, নিউট্রিশন, স্পা, আই ল্যাশ এক্সটেনশন, স্কিন থেরাপি ইত্যাদি শেখানো হয়ে থাকে। এমনকি ‘ ‘personal grooming’ ক্লাসও করানো হয়। হেয়ার ড্রেসিং এর ক্ষেত্রে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হল জাভেদ হাবিব একাডেমি। হেয়ার ফাউন্ডেশন কোর্স, কম্প্রিহেনসিভ হেয়ার কোর্স সহ একাধিক চুল পরিচর্যা ও রক্ষনাবেক্ষণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেন প্রফেশনাল ট্রেইনাররা। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সাধারণ পার্লার গুলি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েও কিন্তু অনেকেই নিজস্ব পার্লার পর্যন্ত খুলে ফেলেছেন। বিষয়টি অনেকবেশি ইনটেনসিভ হওয়ায় এবং নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ থাকায় নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব পরিবারের ছেলে মেয়েরাই এই পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন।
নিজেকে কিংবা অপরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, প্রেজেনটেবল করে তোলা হল একটি আর্ট। আর একজন পেশাদার আর্টিস্ট এর কাজের মধ্যে থাকবে অভিনবত্ব, থাকবে প্রমিনেন্সি। আসলে বিউটিশিয়ানরা শুধু রূপচর্চা করেন না, মনচৰ্চাও করেন। রূপের সাথে মনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। মনকে ভালো রাখার, টেনশন ফ্রি রাখার এক অনবদ্য পন্থা হল রূপচর্চা। বলা যায় যে সাজে এবং যে সাজায় দুজনের মনেই স্বতঃস্ফূর্ততা, প্রফুল্লতা নিয়ে আসে। আর সেই জন্যই এর আকর্ষণ এবং চাহিদা কালাতিক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।