ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

দেশজুড়েই একটা সময়ে বিরাট ধাক্কা খেয়েছিল মৃৎশিল্প। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ নানা রাজনৈতিক কারণে এই সময়ে দেশজুড়ে চলছে চীনা দ্রব্য বয়কটের ডাক। তারই মধ্যে মাটির প্রদীপকে হাতিয়ার করে ব্যাপক লাভ করেছে মৃৎশিল্পীরা৷ আগামী কিছু বছর আরও এই অবস্থাই চলতে পারে।

 

দীপাবলিতে অনলাইন মাধ্যমে প্রদীপ বিক্রির ব্যবস্থা কুম্ভকারদের জীবনে সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে

খাদি ইন্ডিয়ার ই-পোর্টালের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে এই প্রদীপ। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ শিল্প কমিশন (কেভিআইসি) এ বছরই প্রথমবার অনলাইনের মাধ্যমে প্রদীপ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষিত 'ভোকাল ফর লোকাল'- প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য ৮ই অক্টোবর  কেভিআইসি অনলাইনের মাধ্যমে প্রদীপ বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এক মাসেরও কম সময়ে ১০ হাজার প্রদীপ বিক্রি হয়েছে। যেদিন থেকে এই ওয়েবসাইটে প্রদীপ বিক্রি শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই এর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। ১০ দিনেরও কম সময়ে বেশিরভাগ প্রদীপই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।

 

কেভিআইসি উৎসাহিত হয়ে আরও নতুন নকশার প্রদীপ অনলাইনে নিয়ে আসে এবং দেখা যায় সেগুলিরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

 

সীমান্তের  উত্তেজনার পরিস্থিতিকেও কাজে লাগিয়েছে দেশের মৃৎ শিল্পীরা। করোনা আবহে যখন সাধারণ মানুষ তথা দেশের দরিদ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা অভাব-অনটনে ভুগছে। তখন তারা নিজের দেশের মাটি দিয়ে প্রদীপ গড়ার কাজ শুরু করল। চিনা মাটির প্রদীপ কিংবা চিনা টুনিবাল্বে না ব্যবহৃত হলেও এবার নিজের দেশের মাটি দিয়ে গড়া প্রদীপের আলোয় সাজল গোটা দেশ। আগামী দীপাবলির আলোর উৎসবেও এরমই হবে সেই আশা রাখছে দেশবাসী। এই চীন ভারত উত্তেজনা যেমন চিন্তার কারণ তেমনই প্রদীপ ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি সুখবরও বটে।

 

চারিদিকে যখন রংমশাল, কালী পটকা, শব্দবাজি নিয়ে কড়া বাধানিষেধ, তখন দেশের প্রতিটি অন্ধকার দূর হয়ে যাচ্ছে এই পরিবেশবান্ধব প্রদীপে।

 

দীপাবলিতে সারা বাংলা জুড়েও দেদার বিক্রি হয়েছে মাটির প্রদীপ। শুধুমাত্র প্রবীণ প্রজন্মই যে তাতে অংশগ্রহণ করছেন এমন নয়, নবীনরাও দোকানে ভিড় করছেন। সমস্ত রিচুয়ালসের বাইরে গিয়ে আলোর উৎসবের দুইদিন নিজের মন প্রাণ ব্যতিরেকেও তার চারপাশের পরিবেশটাতে সাবেকিয়ানার রং ছেটাতে চাইছেন। আখেরে লাভ হচ্ছে প্রদীপ নির্মাতাদেরই।

 

মাটির বাসন এর বিকল্প হিসাবে অ্যালুমিনিয়ামের জিনিস বাজারে এলেও মাটি তৈরি জিনিসের কৌলিন্য ম্লান হয়নি। গ্রামাঞ্চলে এখনো মাটির বাসন ব্যবহৃত হয়। বহু মানুষ এই শিল্পের কাজ করে তাদের রুজি রোজগার চালাচ্ছেন।

 

এরই মধ্যে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে আগামীদিনে দেশজুড়ে রেলের এলাকাকে ১০০% প্লাস্টিক মুক্ত এলাকায় পরিণত করতে চাইছেন তারা। তাই সমস্ত চায়ের দোকানদারদের বলা হয়েছে প্লাস্টিকের কাপের বদলে মাটির ভাঁড় ব্যবহার করতে। ভবিষ্যতে দেশজুড়েই এই ব্যবস্থা চালু করতে চায় দিল্লী।

 

মাটির গয়নার চাহিদাও কিন্তু এখন গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের পথে। এথনিক জ্যুয়েলারি বা ফোক জ্যুয়েলারি হিসেবে মহিলারা এখন এই গয়নার দিকেই ঝুঁকছে। বাড়ছে ব্যবসাও।

 

এই সময়ে মাটির আরও ব্যবহার বেড়েছে বাড়িতে নানা নার্সারি তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায়।পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং শখের বসেই মানুষ ঘরে এখন নার্সারির মাধ্যমে বাড়িতে গাছব সাচ্ছে এবং ফলন হচ্ছে। তাতেও প্রয়োজন হয় মাটির। তাই মাটির চাহিদা বাড়ছে। শহরের ফ্ল্যাটে জায়গা কম থাকায় অনেকে বাড়ির ছাদেও এইরকম নার্সারির ব্যবস্থা করছে।

 

প্রচুর পরিমাণ মাটি লাগে ইটভাটায় উৎপাদনের কাজে৷ আশেপাশে মাটির জোগাননা থাকলে ইটভাটা কার্যত চলবেইনা। তাই এই ক্ষেত্রেও মাটির ব্যবসা লাভজনক হয়ে উঠেছে।

সবমিলিয়ে তাই কিছু বছরের মন্দা কাটিয়ে আবার আগের মতই লাভের আশা দেখতে চলেছেন মৃৎশিল্পী এবং ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যতে এই সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ