কলাগাছের ফুল ও কাণ্ড দিয়ে আচার - ভালো রোজগারের নতুন সম্ভাবনা
গরম ভাতের পাতে হোক বা রুটি পরোটার সঙ্গে ,একটু খানি আচার সহযোগে আমাদের রোজকার সাধারণ খাবার গুলোই অসাধারণ হয়ে ওঠে।আমরা নানা রকমের আচার খেতে অভ্যস্ত ,যেমন কাঁচা আমের আচার ,কুলের আচার ,তেতুলের ,চালতার বা লংকার আচার কিন্তু আজ আমরা এমন দুটি আচারের কথা জানবো যেটা খাওয়ার অভিজ্ঞতা এখনো খুব কম মানুষেরই হয়েছে। একদম নতুন ধরণের সেই আচার দুটি হলো কলা গাছের ফুল (মোচা) ও কান্ড (থোড়) দিয়ে আচার।
কলা গাছের ফুল অর্থাৎ মোচা ও কান্ড অর্থাৎ থোড় দিয়ে এই অভিনব আচার তৈরির পদ্ধতি কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় ,মূলত তামিলনাড়ু হলো এর উৎপত্তিস্থল । তবে গোটা দক্ষিণ ভারতই এখন এর গুণমুগ্ধ। এই আচার তৈরির পদ্ধতি সহজ এবং তৈরী করার পর অন্তত ১বছর অবধি সাধারণ আবহাওয়ায় ভালো থাকে।
এই আচারের গুণমানও বেশ ভালো হয় কারণ এতে ,১) প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে ,২)কলা গাছের বাতিল অংশ দিয়ে তৈরি হয় ফলে সহজলভ্য ,৩) বিনিয়োগ অনেক কম ,৪) ইটা ভাত ,রুটি,ধোসা বা ইডলি সব কিছুর সাথেই খাওয়া যায় ,৫)গ্রামীণ মহিলাদের পক্ষে আদর্শ ব্যবসা বা জীবিকা।
কলা গাছের মোচা ও থোড় দিয়ে এই অভিনব আচার ভালো রোজগারের নতুন দিশা খুলে দিয়েছে
ব্যবসার সম্ভাবনা : NRCB অর্থাৎ Natural Resources Conservation Board এই আচার তৈরির পদ্ধতিকে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ১৬ জন উদ্যোক্তাকে দায়িত্ব দেয় এবং খুবই ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তামিলনাড়ুর KRL foods নামের একটি কোম্পানি কলার মোচা ও থোড়ের আচার তৈরির ব্যবসা তামিলনাড়ু ,কর্ণাটক,কেরালা ,গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা চালাচ্ছে এবং ৫০ এর ওপর ডিস্ট্রিবিউটর এদের সাথে যুক্ত।এরা এই আচার মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে রপ্তানিও করে থাকে। অবাক করার বিষয় হলো এই কোম্পানিটি শুধুমাত্র এই দুটি আচার বিক্রি করে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন টার্নওভার করেছে। শুধু তাই নয় ,তামিলনাড়ুর একটি NGO এই কাজের জন্য প্রায় ৩০০০ মহিলার কর্মসংস্থান করেছে এবং এই কাজ করে প্রথম বছরেই ৫ লক্ষ্ টাকার মুনাফা করতে পেরেছে। একজন গৃহবধূ ,শ্রীমতি বিরুথম্বল এই দুটি আচারের ব্যবসা করে এখন প্রতি মাসে ২.২ থেকে ২.৬ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছেন এবং এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য তাকে ‘Best Women Entrepreneur Award’ in 2017 পুরস্কার দেওয়া হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুজতে পেরেছেন যে আগামীদিনে মোচা ও থোড়ের আচার দক্ষিণ ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে ক্রমেই সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়বে। এই আচারের ব্যবসা থেকে শুধুমাত্র লাভের আশাই আছে ,ক্ষতির আশংকা খুবই কম কারণ এই ব্যবসায় বিনিয়োগ কম কিন্তু চাহিদা বেশি। তাই যদি নতুন কোনো ব্যবসার কথা মাথায় আসে এই ব্যবসাটিকে অবশ্যই বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
তথ্য সূত্র : http://nrcb.res.in/successstory/11-banana-flower-pickle.pdf