রোজগারের নিরিখে জুয়েলারি ডিজাইনিং বর্তমানে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে
একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে বিশ্বায়নের চাকায় মানুষের জীবনে যে গতি এসেছে তাতে শিক্ষা,শিল্প,সংস্কৃতি ,ফ্যাশন সবেতেই লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া । মানুষ সমস্ত পুরোনো ধ্যান ধারণাকে ত্যাগ করে নতুন ও অভিনব চিন্তা ভাবনাকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন। কাজের জগতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন ,কত রকমের নতুন পেশা তৈরি হয়েছে এবং মানুষ সেই পেশায় সফলও হচ্ছেন। সেইরকমই একটি পেশা হলো জুয়েলারি ডিজাইনিং।
পোশাক ,জুতো ,ব্যাগ ইত্যাদির সাথে মানানসই গয়না এখন সাজসজ্জার অপরিহার্য দিক। মেয়েদের সাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গয়না ,ভারী বা হালকা যেকোনো গয়নাই নারীদের সৌন্দর্য্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। সোনা ,রুপার মতো মূল্যবান ধাতুর গয়নাই হোক বা ইদানিংকালের অক্সিডাইজ মেটালের কৃত্রিম গয়না ,সবকিছুই কিন্তু নারীদের কাছে সমান প্রিয়।এই গয়না গুলি তৈরির পিছনে যে শিল্পীরা আছেন তাদেরই পোশাকি নাম হলো জুয়েলারি ডিজাইনার। প্রাচীনকাল থেকেই বহু মানুষ এই শিল্পকর্মের সাথে যুক্ত আছেন কিন্তু পূর্বে তাদের এতো পরিচিতি ছিলোনা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এই শিল্পীরাও এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন ও নিজেদের শিল্পকর্ম দুনিয়ার সামনে তুলে ধরে খ্যাতি অর্জন করছেন। এখন বহু ছেলে মেয়ে প্রথাগত উচ্চশিক্ষায় না গিয়ে এই কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল হচ্ছেন। তাই আজ আমরা এই নতুন কিন্তু জনপ্রিয় পেশাটি সম্পর্কে জন্য এবং কিভাবে এই কোর্স করে একজন সফল জুয়েলারি ডিজাইনার হয়ে ওঠা যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
জুয়েলারি ডিজাইনিং এর ডিগ্রি কোর্স করার জন্য একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক বা সমকক্ষ বোর্ড এক্স্যাম পাশ করতে হবে। যেকোনো শাখার ছাত্র ছাত্রীই এই কোর্স করতে পারবেন। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে একজন নতুন জুয়েলারি ডিজাইনার কোনো কোম্পানিতে বাৎসরিক ৩ লক্ষ্য টাকার চাকরি পেতে পারেন এবং অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে টাকার অনেক বেড়ে ১০ লক্ষ্য অবধি হতে পারে।
জুয়েলারি ডিজাইনারের কাজ
১) ক্লায়েন্টের থেকে গয়নাটাটির সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে ,অর্থাৎ গ্রাহকের সাথে বার বার আলোচনা করে জেনে নেওয়া যে তারা ঠিক কিরকম গয়না চাইছেন।
২) এবার সেই গয়নার ডিসাইন প্রস্তুত করতে হবে ,হাতে বা C A D সফটওয়ারের সাহায্যে।
৩) গয়নার কৃত্রিম মডেল বা নমুনা তৈরি করতে হবে ক্লায়েন্টের অনুমোদনের জন্য।
৪) ক্লায়েন্টের অনুমোদন পেলে প্রথমে সেই গয়নার একটা প্রতিলিপি বানাতে হবে যেটা দেখে কারিগরেরা বড় সংখ্যায় বা অর্ডার করা সংখ্যায় গয়না টি বানাবেন।
৫) গয়না প্রস্তুত করতে যে মূল্যবান ধাতু ,পাথর প্রয়োজন সেগুলির মান নির্ধারণ করতে হবে।
৬) গয়না প্রস্তুত করতে কোন মেশিনারি ব্যবহার করা হবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
জুয়েলারি ডিজাইনিংয়ে যে কোর্স গুলি পড়ানো হয়
কোর্স |
সময়সীমা |
আনুমানিক কোর্স ফিস |
বি ডেস ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
৪ বছর |
আড়াই লক্ষ প্রতি টাকা বছর |
বি ভোক ইন জুয়েলারি ডিসাইন |
৩ বছর |
দুই লক্ষ্ পঁচিশ হাজার টাকা প্রতি বছর |
বি এস সি ইন জুয়েলারি ডিসাইন |
৩ বছর |
আড়াই লক্ষ্ টাকা প্রতি বছর |
বি এ ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
৩ বছর/৪ বছর |
দেড় লক্ষ টাকা প্রতি বছর |
বি এস সি ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড টেকনোলজি |
৩ বছর/৪ বছর |
আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ প্রতি বছর |
বি এস সি ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট |
৩ বছর/৪ বছর |
আড়াই লক্ষ্ থেকে তিন লক্ষ টাকা প্রতি বছর |
ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
১ বছর |
ষাটহাজার থেকে আশি হাজার টাকা প্রতি বছর |
পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
৪ মাস থেকে ১ বছর |
সত্তর হাজার থেকে নব্বই হাজার টাকা প্রতি বছর |
কম্পিউটার এইডেড ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
৪ মাস থেকে ১ বছর |
সত্তর হাজার টাকা সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য |
এডভান্স ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
২ বছর |
নব্বই হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা প্রতি বছর |
এডভান্স ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট |
২ বছর |
দেড় লক্ষ্ টাকা প্রতি বছর |
এডভান্স ডিপ্লোমা ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড টেকনোলজি |
২ বছর |
দেড় লক্ষ্ টাকা প্রতি বছর |
এম ডেস ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
২ বছর |
দুই লক্ষ্ পঁচাত্তর হাজার টাকা প্রতি বছর |
এম এস সি ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
২ বছর |
এক লক্ষ্ নব্বই হাজার টাকা প্রতি বছর |
এম এ ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং |
২ বছর |
এক লক্ষ্ কুড়ি হাজার টাকা প্রতি বছর |
এম এস সি ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট |
২ বছর |
তিন লক্ষ্ টাকা প্রতি বছর |
এম এস সি ইন জুয়েলারি ডিজাইনিং এন্ড টেকনোলজি |
২ বছর |
দুই লক্ষ্ সত্তর হাজার টাকা প্রতি বছর |
সার্টিফিকেট কোর্স ইন জুয়েলারি ডিসাইন |
৬ মাস থেকে ১ বছর |
কুড়ি হাজার থেকে ষাট হাজার টাকা |
কয়েকটি জুয়েলারি ডিজাইন ইনস্টিটিউট
১) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জুয়েলারি (সরকারি ), যাদবপুর ,কলকাতা ৭০০০৩২ , (০৩৩)২৪১২-৩৯৫৫(যোগাযোগ)
২) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত ), জিটিপিএল অফিসের কাছে ,কলকাতা , ৭০৪৪৪৩৯৬৬৩(যোগাযোগ)
৩ )ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অফ ডিসাইন , লেক টাউন কলকাতা ,০৬২৯১০ ৬৫১৭৭ (যোগাযোগ)
৪ ) অব্জেট দি আর্ট (জুয়েলারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ), বালিগঞ্জ ,কলকাতা ৭০০০১৯ , ৭৯৪৭৪০৪৫৩৭ (যোগাযোগ)
৫ ) সিন্জেম ইনস্টিটিউট , কলকাতা -৭০০০২০ , ৯৮৩০৫৮৮১৩৫ (যোগাযোগ)
৬ ) পি আই টি ই প্রফেক্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন , চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল ,৮৫৮৪৮৫৩৭৭১ (যোগাযোগ)
৭ ) স্বর সঙ্গম -এ বিরল ইনস্টিটিউট অফ ভিজ্যুয়াল এন্ড পারফর্মিং আর্টস , বিড়লা একাডেমি ,কলকাতা -৭০০০২৯
৮ ) ড্রিমজোন স্কুল অফ ক্রিয়েটিভ স্টাডিস , জিটিপিএল অফিসের কাছে ,কলকাতা ,৭০৪৪৪৩৯৬৬৩ (যোগাযোগ)
৯ ) স্বর্ণসুখ ইনস্টিটিউট অফ জেমোলজি এন্ড জুয়েলারি ডিসাইন, ক্যাম্যাক স্ট্রিট ,কলকাতা ,৮৪২০৫৮৯৪৮৯ (যোগাযোগ ),
১০) স্বামী প্রানাভানন্দ জেমস এন্ড জুয়েলারি একাডেমি, শ্রীরামপুর ,পশ্চিমবঙ্গ -৭১২২০৪
জুয়েলারি ডিজাইনিং গত দশ বছরে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে। প্রবল কল্পনা শক্তি ও কাজ শেখার ইচ্ছা থাকলে তবেই একজন ভালো জুয়েলারি ডিজাইনার হওয়া সম্ভব। বহুমূল্য অলংকারের দুনিয়ায় যবে থেকে বিজ্ঞাপন প্রধান ভূমিকা পালন করা শুরু করেছে তবে থেকেই গয়নার ডিসাইন নিয়ে মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছেন এবং স্বভাবতই ডিজাইনারদের কদরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে,তাই আর দেরি না করে আজই জুয়েলারি ডিজাইনের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করুন এবং আগামীদিনে একজন সফল ডিজাইনার হিসেবে খ্যাত হন।