ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

'কাউন্সেলিং' শব্দটি বর্তমানে প্রত্যেকের কাছেই সুপরিচিত। পেশা নির্বাচন হোক কিংবা উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচন, মানসিক অবসাদ কাটানো হোক কিংবা অতিরিক্ত  স্ট্রেস বা চাপ কাটানো, এমনকি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।  আক্ষরিক অর্থে কাউন্সেলিং বলতে বোঝায় পরামর্শ প্রদান। ব্যক্তিগত, সামাজিক, মানসিক, শিক্ষাগত সমস্যার সমাধানে পেশাদার ব্যক্তির নির্দেশনা গ্রহণ ও অনুসরণ  করার নামই কাউন্সেলিং।

 

কাউন্সেলিং এর পরিধি সুবিশাল


জীবন যত আধুনিক হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যাগুলিও হয়ে উঠছে জটিলতর। আর সেই জন্যই একাধিক ক্ষেত্রে সঠিক পরামর্শপ্রদানের জন্য রয়েছেন কাউন্সেলররা। যেমন এডুকেশন কাউন্সেলর, বিজনেস কাউন্সেলর, ক্যারিয়ার কাউন্সেলর, রিলেশনশিপ এন্ড ম্যারেজ কাউন্সেলর, সাইকোলজিকাল কাউন্সেলর ইত্যাদি। 

 

এডুকেশন কাউন্সেলর


কোন ছাত্র হয়তো মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পর কি বিষয় নিয়ে পড়বে সেই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে, তখন সে অনায়াসেই একজন এডুকেশন কাউন্সেলর   এর পরামর্শ নিতে পারে। শুধু তাই নয়, একজন ছাত্র বা ছাত্রীর কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ রয়েছে সেসব বিচার বিশ্লেষণ করে একজন কাউন্সিলর তাকে উপদেশ দেন যে কোন বিষয় নিয়ে পড়লে ভবিষ্যতে সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

বিজনেস  কাউন্সেলর


আবার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরামর্শ দানের জন্য রয়েছেন বিজনেস কাউন্সেলর। যারা মূলত ক্লায়েন্টদের জন্য বিসনেস প্ল্যান করে থাকেন। বাজেট নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রোডাকশন, কর্মচারীদের পে-রোল ঠিক করা থেকে শুরু করে প্রচার ক্যাম্পেইন সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে থাকেন এই বিজনেস  কাউন্সেলরা। কোনো পণ্যবিক্রি সংক্রান্ত ব্যবসা হলে সার্ভে করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া, বিজ্ঞাপনের মাধ্যম নির্বাচন করা, এমনকি পণ্যের বিক্রি কমলে তা বাড়ানোর জন্য যথাযথ স্ট্রাটেজি নির্ধারণও করে থাকেন তারা।

কেরিয়ার কাউন্সেলর


জেনারেল ডিগ্ৰী কোর্স নিয়ে পড়াশোনা করার পর কোন পথে এগোবেন, কিভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলবেন নিজের ক্যারিয়ার, টেকনিকাল বা অন্য কোনো প্রফেশনাল কোর্স করার পরেও অনেকে বুঝতে পারেন না যে কোন পথে কিভাবে এগোলে নিজেদের ভবিষ্যৎ গঠন করা যায় - তারা অনায়াসেই শরণাপন্ন হতে পারেন একজন কেরিয়ার কাউন্সেলরের।

ম্যারেজ কাউন্সেলর


আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতা অনেকটাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। সকলেই ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে যেন! কে কাকে টেক্কা দেবে সেই নিয়েই চলছে নিরন্তর টানাপোড়েন। বদলে গেছে অতি পরিচিত সম্পর্কের সমীকরণ। স্বামী-স্ত্রী, পিতামাতা-সন্তান ইত্যাদি  সকল সম্পর্কের মধ্যেকার স্বাভাবিক সমীকরণ বদলে গেলেই জীবনে নেমে আসে অশান্তি। তাই সঠিক সূত্র প্রয়োগ করে বদলে যাওয়া সমীকরণ মেলাতে সিদ্ধহস্ত রিলেশনশিপ কাউন্সিলররা। হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক, শান্তি ফিরিয়ে দিতে তারা বদ্ধ পরিকর। এছাড়াও আছে ম্যারেজ কাউন্সেলিং। বিবাহের আগে কিংবা বিবাহের পরেও লোকে ম্যারেজ কাউন্সেলরের পরামর্শ নিচ্ছে নানান সমস্যার সমাধানের তাগিদে।

সাইকিয়াট্রিস্ট- কাউন্সেলিং সেশন


কাউন্সেলিং এর সবচেয়ে বড়ো ক্ষেত্রটি যুক্ত আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে। ব্যক্তিগত জীবনে কোনো আঘাত থেকে হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে, কাজের জগতের অতিরিক্ত চাপ, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি নানা কারণে মানসিক স্বাস্থ্যে বিকার দেখা যায়। মানুষের জীবনে নেমে আসে অবসাদ ও হতাশার অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান সাইকিয়াট্রিস্ট। একের পর এক কাউন্সেলিং সেশন এর মাধ্যমে তারা মানুষকে সুস্থতার পথে নিয়ে যান। কোনো কোনো ব্যক্তি আছেন যারা অল্পতেই প্রচন্ড টেন্সড হয়ে পড়েন, anxiety-তে ভোগেন, অনেকে উচ্চস্থান থেকে ভয় পান,অনেকে আবার অন্ধকার ভয় পান, ছাত্র ছাত্রীরা এক্সাম ফোবিয়াতে ভোগে- এগুলো সব এক ধরণের মানসিক সমস্যা। এর জন্য কাউন্সেলরের পরামর্শ নিয়ে থাকেন সবাই। তবে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাওয়ার অর্থ কিন্তু এমনটা নয় যে সেই ব্যক্তি পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন। সমাজে এই ট্যাবুটা রয়ে গেছে আজও। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু কম বেশি উপরে উল্লিখিত সমস্যা গুলোর সম্মুখীন হই, আর  সাইকিয়াট্রিস্টরা আমাদের কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখান।

 


কাউন্সেলিং বিষয়টা ভীষণই ইন্টারেষ্টিং। আর যারা অন্যদের সাথে খুব ভালো কম্যুনিকেট করতে পারেন, অন্যদের বোঝাতে বা মোটিভেট করতে পারেন, অন্যের মনের কথা অতি সহজেই বুঝতে পারেন তারা এই পেশার জন্য একেবারেই উপযুক্ত। একাধিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাউন্সেলিং এর কোর্স করানো হয়। সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা দু ধরণের কোর্সই করানো হয়েছে থাকে কাউন্সেলিং এর উপর। এক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয় গ্রাজুয়েশন। যদিও অন্যান্য ক্ষেত্র গুলি ছাড়া সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং কোর্স এর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক সময়ই বেশি চাওয়া হয়ে থাকে। 


আমাদের জীবনে প্রায়শই এমন কিছু সমস্যা উদ্ভূত হয়, যেখানে আমরা কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারিনা, তখনই এমনকিছু বিচক্ষণ পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে যা আমাদের প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আর সেই জন্যই মার্কেটে কাউন্সেলদের চাহিদা প্রচুর। তাই যারা এই পেশা নিয়ে প্যাশনেট এবং যারা এই পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান তারা সর্বপ্রথম নিজের টপিক অফিস ইন্টারেস্ট নির্বাচন করুন অর্থাৎ আপনি একজন এডুকেশন কাউন্সেলর হতে চান নাকি বিসনেস বা অন্য কিছু সেটা ঠিক করুন। তারপর প্রফেশনাল ট্রেনিং নিন। কারণ একজন ভালো পরামর্শদাতা হতে গেলে আপনার আন্তরিক উদ্যোগের পাশাপাশি কাউন্সেলিং এর সঠিক পন্থা জানা অত্যন্ত জরুরি। আর সেইজন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।  হাজারো ইনস্টিটিউট ট্রেনিংএর পসরা সাজিয়ে প্রস্তুত এর জন্য। শুধু নিজস্ব উদ্যম আর ভালোবাসা নিয়ে মাঠে নামার দায়িত্ব আপনার।

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ