ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসা - বাড়িতে বসেই সৃষ্টি সুখের আনন্দ
সালঙ্কারা নারী সেই প্রাচীনকাল থেকেই আদর্শ সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি । সোনা ,রুপা ,হিরা ও বিভিন্ন ধরনের মুল্যবান গয়না পরার রেওয়াজ মেয়েদের মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত । তবে ক্রমবর্ধমান মুল্য বৃদ্ধি ও খাঁটি ধাতুর অভাবে ইদানিং মানুষ এইসব গয়না পরা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে এবং সেই স্থান দখল করে নিয়েছে ফ্যশন জুয়েলারি বা আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারি ।
ফ্যাশান জুয়েলারির জয়যাত্রার সুত্রপাত - ২০০০ সালের একদম শুরুর দিকে যখন সাধারন মানুষ সোনা রুপার গয়নার একটা বিকল্প খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়েই ভারতে ইমিটেশন গয়নার রমরমা শুরু হয় ,এর পর সময় যত গড়াতে থাকে বিকল্প গয়নার বাজার ফ্যশন জুয়েলারি বা আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারির দখলে চলে যায় । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৫ থেকে ২০১৯ এর মধ্যেই ভারতে ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসা প্রায় ৮৫% বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ।শুধু তাই নয়,ভারতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান জি ডি পির ৫.৯ %। আগামি বছরগুলিতে এই ব্যবসা আরও বিস্তার পাবে বলে অর্থনীতিবিদ দের একাংশ মনে করছেন ।
বাড়িতে ফ্যাশান জুয়েলারির ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি - একুশ শতাব্দীর মানুষ তথা মহিলারা নিজেদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন,তারা জানেন ঠিক কোন সময় তারা কি পোশাক পরবেন এবং তার সাথে ঠিক কেমন মানানসই গয়না পরবেন। কাস্টমারের চাহিদা এত পরিষ্কার হওয়ায় ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসায় একটা জোয়ার এসেছে যেটা ব্যবসায়ি ও কাস্টমার দুজনের পক্ষেই লাভজনক । আপনার মধ্যে যদি একজন শিল্পী বাস করেন তাহলে এই ব্যবসা আপনার জন্য আদর্শ। যদি কোনো সৃষ্টি আপনাকে আনন্দ দেয়,যদি আপনার কল্পনা শক্তি র অপর আপনার আস্থা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এই কাজের উপযুক্ত ।
এখন আমাদের জানতে হবে যে কিভাবে বাড়িতে বসে ফ্যাশান জুয়েলারির ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে
নিজেই গয়না তৈরি করে বিক্রি করা - ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসায় সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতি টি হল কাস্টমাইসড গয়না তৈরির ব্যাবসা । এক্ষেত্রে আপনি নিজেই কাঁচামাল কিনে এনে নিজের শিল্প চেতনা ও কাস্টমারের চাহিদাকে মাথায় রেখে গয়না বানাতে পারেন । এই ব্যবসা আপনি অনলাইনেও করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন প্রায় সব কিছুই মানুষ বাড়িতে বসে দেখতে জানতে পারছেন এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনলাইন শপিংএর রমরমা তাই বাড়িতে গয়না বানিয়ে খুব সহজেই একজন মানুষ নিজের ব্যবসায় লাভ করতে পারেন । এর জন্য আপনার কয়েকটি জিনিসের প্রয়োজন পড়বে যেমন -কাঁচামালের পর্যাপ্ত জোগান, আপনার কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট ঘর বা কাজের জায়গা ,কাস্টমাইসড গয়না তৈরির কিট এবং শেখার অদম্য ইচ্ছা । এই ব্যবসার প্রধান মূলধন হলেন আপনার গ্রাহক বা কাস্টমারেরা। এদের সঙ্গে উপযুক্ত ও বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে । কলেজ স্টুডেন্ট ,গৃহবধূ ,রিটায়ার্ড বা যেকোনো বয়েসের মানুষই এই কাজটি করতে পারেন ,এখন তো অনেক মহিলা তাই ফুলটাইম কাজ হিসেবেও ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসা বেছে নিচ্ছেন ।
এছাড়াও আরও দুটি কার্যকর পদ্ধতি আছে যা আপনাকে এই ব্যাবসায় সাফল্য এনে দিতে পারে ,সেগুলি হল -
হোলসেল বা পাইকারি ব্যবসা - এই ব্যাবসা করার ইচ্ছা থাকলে আপনি পাইকারি বা হোলসেল দিয়ে শুরু করতে পারেন ,এই ব্যাবসায় আপনি একজন গয়না নির্মাতার কাছ থেকে সরাসরি পাইকারি রেটে গয়না কিনে প্রায় সেই দামেই গ্রাহক কে বেচতে পারেন ।মনে রাখতে হবে এই ব্যবসায় প্রথমে আপনাকে ভাল টাকা বিনিয়গ করতে হতে পারে কারন আপনাকে হোলসেলে একসাথে অনেক গয়না তুলতে হবে ।আরেকটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হল এই ব্যাবসায় লাভ হতে সময় লাগে ফলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে ।
রিটেল বা খুচরো ব্যাবসা - এই ধরনের ব্যাবসা করতে আপনাকে খুব বেশি অর্থ বিনিয়গ করতে হবে না কারন আপনি এখানে গয়না নির্মাতা কিংবা হোলসেল ব্যবসায়ির কাছ থেকে গয়না এনে বাড়ি থেকে বিক্রি করতে পারেন এবং এখানে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গয়না আনার সুবিধা থাকে ।
যেকোনো ব্যাবসা করতে গেলে খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যবসা কিন্তু চাকরি নয়,সুতরাং মাসের শেষে মাইনের অভ্যাস যদি আপনার থাকে তা ছাড়তে হবে। ব্যবসায় রিস্ক ফ্যাক্টর থাকবেই অতএব ভাল খারাপ সব পরিস্থিতির জন্যই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথমেই হয়ত আপনার ব্যাবসায় লাভ হবে না সেখানে আপনাকে ধৈর্যের পরিচয় অবশ্যই দিতে হবে। এই জিনিস গুলি যদি আপনি মাথায় রাখতে পারেন তবে ফ্যাশান জুয়েলারি ব্যবসায় সাফল্য আপনার দরজায় আসবেই ।