একা বা যৌথভাবে ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক ধাপ
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিল্পপতিরা রাতারাতি সাফল্য লাভ করেননি ,এর জন্য তাদের সঠিক সময় সঠিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত,বিনিয়োগ ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। ব্যবসা বড় হোক বা ছোট; শুরুর প্রতিটি ধাপই সমান গুরুত্ত্বপূর্ণ। একার ব্যবসা বা যৌথ ব্যবসা যেটাই শুরু করতে চান আগে দরকার প্ল্যানিং ,উপযুক্ত পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবসায় অর্থ,সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করা কখনোই উচিত নয়।
এবার বুঝতে হবে যে ব্যবসা মানেই মুনাফার চিন্তা ,এটা কোনো সমাজ সেবা নয় ,লাভ ক্ষতির হিসেব সবসময় চলতেই থাকবে তাই সবসময় চোখকান খোলা রাখতে হবে এবং আপডেটেড থাকতে হবে। যেকোনো ব্যবসাতেই কোনো না কোনো পণ্য বিক্রি করতেই হয় ,কিন্তু নতুন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কখনো কখনো তা কঠিন হয়ে পড়ে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক যে কিভাবে আমরা ব্যবসা শুরুর প্রস্তুতি নিতে পারি
ব্যবসার ধরণ স্থির করুন : যেকোনো ব্যবসা করার আগে তার ধরণ স্থির করতে হবে ,আপনি একক ব্যবসায়ী হতে চান না কারুর সাথে যৌথ ভাবে ব্যবসা করতে চান সেই সিদ্ধান্ত নিন ,কারণ একক ব্যবসা ও যৌথ ব্যবসা অনেকাংশেই আলাদা। নিজের ব্যবসায় আপনি নিজেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিন্তু যৌথ ব্যবসায় ছোট বড় কোনো সিদ্ধান্তই এক নেওয়া যাবে না।
বিনিয়োগের মাত্রা নির্ধারণ ও ব্যবসার আয়তন : অর্থের বিনিয়োগ যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ধাপ। এই বিনিয়োগের ওপরেই নির্ভর করে ব্যবসার আয়তন। অনেক সময়েই নতুন ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারেন না যে ছোট ,মাঝারি বা বড় কোন স্কেলে ব্যবসা শুরু করবেন। সাধারণত ,ছোট মাপের ব্যবসা দিয়েই কাজ শুরু করা উচিত তাতে ব্যবসার কাজ সামলানো শুধু সহজ হয় তা নয় লোকসান হলেও কমের ওপর দিয়েই হয়।
প্রচুর পড়ুন : পৃথিবীর সেরা মানুষেরা যথার্থই বলেছেন যে পড়ার কোনো বিকল্প হয়না। যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই প্রচুর পড়ুন ,ব্যবসা সংক্রান্ত সব রকম লেখা পড়ে ফেলুন এতে আপনার বিরাট সুবিধা হবে ,যত বেশি পড়বেন তত বেশি জানবেন ও বুঝবেন এবং অভিজ্ঞ হবেন। একবার বিল গেটস বলেছিলেন তিনি সারা বছর কম করে ৫০ টি বই অন্তত পড়েন ,এতে ওনার কাজের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। সুতরাং আজই পড়ার অভ্যাস শুরু করে দিন।
যৌথ ব্যবসায় কাজ ও দায়িত্বের ভাগিদারী : আপনি যদি যৌথ ব্যবসা করার কথা ভাবেন তাহলে শুরুতেই সমস্ত কাজ ও দায়িত্ব ভাগ করে নিন ,অনেক সময়েই বিজনেস পার্টনার দের মধ্যে কাজের দায়বদ্ধতা নিয়ে সময় ও মনোমালিন্য ঘটতে দেখা যায় ,যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই সেটা অনভিপ্রেত।
যৌথ ব্যবসায় অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা থাকা : অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা থাকা যৌথ ব্যবসার মূলধন। দুই বন্ধু হোক ,দুই ভাই ,দুই বোন বা আত্মীয় পারস্পরিক অর্থনৈতিক বোঝা পড়া থাকা আবশ্যিক নাহলে ক্ষতি অনিবার্য। ব্যবসায়িক তো বটেই ব্যক্তিগত স্তরেও বিরাট ধাক্কা লাগে। তাই এব্যাপারে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে।
ব্যবসার স্থান নির্বাচন : সবার আগে কথা থেকে ব্যবসা টা পরিচালনা করতে চাইছেন সেটা স্থির করুন কারণ আপনি যত ছোট বা বড় ব্যবসায়ী করুন না কেন আপনার একটি অফিস লাগবেই যেখান থেকে আপনি কাজ করবেন তাই এই কাজ টি ফেলে রাখবেন না।
ব্যবসা রেজিস্টার করুন : যতই পরিকল্পনা করুন না কেন ব্যবসা কিছুতেই শুরু করতে পারবেন না যদিনা আপনি ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন করান। রেজিস্ট্রেশন না করলে আপনার ব্যবসা আইনসম্মত হবে না বা আপনি ট্রেড লাইসেন্স ও পাবেন না। সেই সঙ্গে ব্যবসার প্যান নাম্বার ও ট্যাক্সেশন নাম্বার এর জন্যও আবেদন করতে হবে। তাই এখনই আপনার ব্যবসা রেজিস্টার করুন।
ব্যবসার বিজ্ঞাপন : যদি আপনি ব্যবসায় তাড়াতাড়ি মানুষের নজর করতে চান সেক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের জুড়ি নেই ,ছোট ও মাঝারি মাপের অনেক বিজ্ঞাপন সংস্থা আছে যারা কম খরচে আপনার বিজ্ঞাপনের সু বন্দোবস্ত করবে।
সবশেষে বলা যায় যে জীবনে নিজের মনের মতো কাজ করার ইচ্ছা থাকলেও সব মানুষ সেই সুযোগ পান না ,কিন্তু আপনার যদি নিজের স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে এক বা একাধিক ব্যবসা দাঁড় করানোর মানসিকতা ও সাধ্য থাকে তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান ,তাই কঠোর পরিশ্রম ,বুদ্ধিমত্তা ও সৎ সাহসকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলুন ও জীবনে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুন।