জিম কি শুধুই ট্রেন্ড না কি আরও কিছু বেশি - জানুন এই বিশেষ প্রতিবেদনে
আপনার যদি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকে তাহলে চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়ালেই জিম যাওয়া মানুষের সংখ্যা ভালোই চোখে পড়বে । ইঁদুর দৌড়ের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আমাদের হাতে সময় যতই কম থাকুক না কেন ফিটনেস নিয়ে সচেতনতাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে্ , আশেপাশে গজিয়ে ওঠা জিম গুলোই তার প্রমান । এই প্রসঙ্গে অবশ্য নানা মুনির নানা মত ,অনেকেই মনে করছেন যে এটা যুগের হাওয়া আবার অনেকে এর ইতিবাচক দিকটাই বেশি দেখতে পাচ্ছেন ।
জিমে গিয়ে কসরত করা সত্যিই প্রয়োজন নাকি শুধুই ট্রেন্ড সে বিষয় আলোচনা করার আগে আমরা ভারতে জিমের প্রচলনের ইতিহাস টা একবার ঝালিয়ে নি । শরীরচর্চার রেওয়াজ ভারতবর্ষে সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে ,আগে রাজা মহারাজারা যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে শরীর চর্চা করতেন পরবর্তীকালে জমিদার বা সমাজের প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য লেঠেল পুষতেন এবং তারা কুস্তির আখড়ায় নিজেদের লোহার মত শরীর গড়ে তুলতেন । আরও পরে বিপ্লবী আন্দলনের সময় থেকে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু সংখ্যক যুবক সু স্বাস্থ্য , খেলা ধুলা ,শারীরিক শক্তি এবং সমাজসেবার জন্য শরীর গঠনের দিকে মন দিত থাকেন । এই সবই কিন্তু ৭০ এর দশক পর্যন্ত কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যেমন ,অ্যাথেলিট ,ফুটবল,ক্রিকেট খেলোয়াড় ,সুইমার ইত্যাদি । ৮০এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ,শুধুমাত্র খেলা ধুলার জগতেই নয় সাধারন মানুষের মধ্যেও ফিটনেস নিয়ে সচেতনতা আস্তে শুরু করে । তবুও সর্বজনগ্রাঝ্য হতে জিম সংস্কৃতিকে অনেক পথ পেরতে হয়েছে ।
জিম কি শুধুই ট্রেন্ড
আমাদের দেশে জিমের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলিউডের প্রভাব সর্বজনবিদিত । ৮০ এর দশকের শেষে ' ম্যায়নে প্যার কিয়া ' সিনেমায় সালমান খানের আত্মপ্রাকাশ সেই সময়কার যুবসম্প্রদায়কে রাতারাতি জিম মুখি করে তুলেছিল । সালমানের সুগঠিত চেহারা তৎকালীন মেয়েদের হৃদয় যেমন নাড়া দিয়েছিল ঠিক তেমনই প্রতিটি ছেলেই নিজের প্রেমিকার চোখে নিজের প্রতি সেই মুগ্ধতাই দেখতে ছেয়েছিল ফলে ভারতে হই হই করে শুরু হল জিম সংস্কৃতি । এর বেশ কিছু বছর পরেও জিম কিন্তু মেয়েদের কাছে ব্রাত্যই ছিল এই পরিস্থিতির পরিবর্তন এল ৯০ এর দশকের শেষে 'দিল ত পাগাল হ্যায় ' ছবির হাত ধরে,এই সিনেমায় মাধুরী দিক্ষিত ও বিশেষ করে কারিশ্মা কাপুরের বার্বি ডলের মত শারীরিক গঠন মেয়েদের ক্রমেই জিমমুখী করে তুলেছিল । তারপর বহু বছর কেটে গেলেও যুব সমাজের জিম আকর্ষণ বেড়েছে বই কমেনি । বর্তমানে ভারতবর্ষে ইউনিসেক্স জিমের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের রুজি রুটি এর সাথে জড়িত ।
জিমের প্রয়োজনীয়তা
'My Body My Rule ' এই প্রবাদ টা বোধয় এই যুগের অন্যতম জনপ্রিয় উক্তি । একজন মানুষ ঠিক কিভাবে নিজের শরীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে চান এটা একদমই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার । আবার এটাও সত্যি যে আজকাল মানুষের রোজকার জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝে আলাদা করে খাওয়া দাওয়ার খেয়াল রাখা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না । ফলে বাড়ছে নানা রকম অসুখ, ডাক্তারদের মত অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের উচিৎ দৈনিক ৪০ মিনিট হাঁটা বা এক্সারসাইজ করা কিন্তু সময় ও উদ্যমের অভাবে আমরা তা মোটেই মেনে চলিনা । জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর সবচেয়ে বড় লাভ হোলো সেখানে একজন প্রশিক্ষক বা ইন্সট্রাক্টর থাকেন যার তত্ত্বাবধানে আমরা নিজেদের পছন্দের শরীর শুধু পাই তা নয় নিয়ম মেনে কসরত করার ফল স্বরূপ ভালো স্বাস্থ্যও অর্জন করি । ইদানীং মহামারীর প্রকোপে সব জিম বন্ধ এবং মানুষের নিয়মিত শরীর চর্চায় বাধা পড়েছে কিন্তু মানুষের ইচ্ছাশক্তির কমতি যে হয়নি এবং জিমের অভ্যাস যে তারা একেবারেই ছাড়তে রাজী নন তা সকালবেলা মর্নিং ওয়াকের বাড়বাড়ন্ত দেখলেই বোঝা যায় ,অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে মানুষ জিমকে নিত্যদিনের সঙ্গী করে ফেলেছেন ।
জিম যাওয়া ট্রেন্ড না আরও বেশি কিছু সেই নিয়ে তর্ক চলতেই থাকবে কিন্তু আগামী দিনে মানুষের জীবণ যাত্রাই বলে দেবে জিম সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ ।