শাড়ি নাকি কুর্তি – কি বলছে ফ্যাশান ট্রেন্ড ?
মায়ের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান কে ? এই নিয়ে ঝগড়ার নিষ্পত্তি আজ অব্ধি কোন মা তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে করতে পারেননি । ঠিক সেরকমই মেয়েদের পছন্দের পোশাক নিয়েও তর্কের অন্ত নেই । পুরনো দিনে মেয়েদের শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পরার অনুমতি বা সাহস কোনটাই ছিল না ,শুধু তাই নয় মেয়েরা কেবল আটপৌরে করে শাড়ি পরতেই অভ্যস্ত ছিলেন ,পরবর্তীকালে ঠাকুর বাড়ির দাক্ষিন্যে সেই শাড়িতে লাগলো আধুনিকতার ছোঁয়া । কালের গতিতে পৃথিবীর সব পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েদের পোশাক আসাকেও এসেছে আমূল পরিবর্তন । এখন মেয়েরা শাড়ি ,সালোয়ার কামিজ ,কুর্তি লেগিন্স ,জিন্স টপ , লংস্কার্ট ,শর্টস্কার্ট ইত্যাদি নানা রকম পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, বয়েস ও অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যেক মেয়ের পছন্দও বেশ আলাদা । তাদের জীবন যাত্রা ও কাজকর্মের ওপরেও তাদের পোশাক নির্বাচন অনেকাংশে নির্ভর করে । তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার যে ফ্যাশন দুনিয়ার প্রভাবও নারীদের পোশাক পরিচ্ছদকে সেই ৭০ এর দশক থেকেই প্রভাবিত করে আসছে ।
মেয়েদের জীবনে কুর্তির আগমন
কুর্তি নামক পোশাকটি প্রধানত পুরুষদের কুর্তারই নারী রূপ ,এই পোশাক পরার রেওয়াজ উত্তর ভারতের মেয়েদের মধ্যেই প্রচলিত ছিল তবে বর্তমান ভঙ্গিতে নয়, আগে এই পোশাকটি মহিলারা ঘাগরার সাথে পরতেন কিন্তু ধিরে ধিরে চুরিদার, পায়জামা ও এখনকার মত জিন্স প্যান্ট বা লেগিন্সের সাথেও পরা শুরু করেন । অতিতে নারীরা ঘরেই থাকতেন ,বাইরের জগতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক তাদের ছিলনা কিন্তু এখন মেয়েরা ঘরে বাইরে সমান দক্ষ তাই বাইরের কাজ করার জন্য স্বচ্ছন্দ পোশাক হিসেবে কুর্তি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । অন লাইনের যুগে মেয়েরা মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে কুর্তির নানা ডিজ্না দেখে নিজের পছন্দের পোশাক নিজেরাই বানিয়ে নিচ্ছেন এছাড়া ক্রমাগত ফ্যাশান ট্রেন্ড এ আসা যাওয়াও কুর্তিকে মেয়েদের মনের অনেক কাছাকাছি এনে দিয়েছে ।
শাড়ির আবেদন এখনও ফ্যাশনে ইন
ভারতীয় নারীরা যে শাড়িতে অনন্য একথা এখন সারা বিশ্বই কায়মনোবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন । শাড়ি শুধুমাত্র একটি পোশাক নয় এর শৈল্পিক দিক নিয়ে মহাকাব্যও রচনা করা যায় । আমাদের দেশের যত রূপ ,যত বৈচিত্র্য সেই সবই ধরা পড়ে এই পোশাকটির মধ্যে ,সারা ভারতের সমস্ত প্রদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির ছায়া পড়ে সেই প্রদেশের শাড়িতে ।পুরাকালে ভারতবর্ষে প্রায় ১০০০ প্রকারের শাড়ি পরার প্রচলন ছিল কিন্তু বর্তমানে মোটে ৩০ প্রকারের শাড়িই বাজারে উপলব্ধ ।
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে শাড়ির ব্যাবহার ও গ্রহণযোগ্যতা চিরকালই প্রথম স্থানে । দেশের তাবড় ডিজাইনাররা নিজেদের সব শো তে ও কালেকশনে শাড়ির যথাযথ ভুমিকা রাখেন এবং তা খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েদের পোশাক নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ।যদিও আজকালকার ব্যস্ত জীবনে ,ভিড় বাসে ,ট্রামে্ ,মেট্রোতে শাড়ি পরে যাতায়াত দুর্বিষহ মনে হয় কিন্তু জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন গুলিতে মেয়েরা এখনও শাড়িকেই বেছে নেন ।
সবশেষে বলা যায় যে শাড়ি হোক বা কুর্তি পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্যই আসল ,এছাড়া প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী তার নিজস্ব স্টাইল বা ধরন তৈরি হয়ে যায় এর সাথে ফ্যাশন ট্রেন্ড এর কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়না ,আবার এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে একজন নারী সেই কিশোরী বেলা থেকে নানা ধরনের ফ্যাশন ট্রেন্ড এর মধ্যে দিয়ে গিয়ে তবেই নিজের স্টাইল তৈরি করতে পারেন । তাই , কুর্তি না শাড়ি কোনটা ফ্যাশনে ইন সেই বিতর্কে আপাতত দাঁড়ি টেনে নারীরা সব পোশাকেই অপরুপা সেই বার্তাই ছড়িয়ে পড়ুক ।