ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

১২ বছরের মেয়ে তিতলি আজ তাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির জন্য পুরস্কৃত হলো,কারণ ফেসবুকের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনকে যোগাযোগ  করে  সে ফ্ল্যাটে ডাকাতি হাওয়া আটকেছে । সকলেই তিতলির বুদ্ধির তারিফ করছেন এবং সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিও সবাই কৃতজ্ঞ।

এরকম অজস্র ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটে চলেছে যার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়া বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলির অবদান অনঃস্বীকার্য।বিশ্বায়নের চাকায় যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে গতি,কাঙ্খিত বস্তুর সহজলভ্যতা, ঠিক তেমনই বেড়েছে কাজের চাপ ও পারস্পরিক দূরত্ব | ঘরে বসেই বিদেশী স্ন্যাক্স বা সিনেমা হয়তো  উপভোগ করতে পারছি কিন্তু প্রিয়জনকে ছাড়া সেই আনন্দ অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে ,কর্ম সূত্রে দূরে থাকা সন্তান বা স্বামী কিংবা নিকট বন্ধুকে দীর্ঘদিন না দেখতে পাওয়ার কষ্টটাও বেড়েছে।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি মানুষকে  একটা  প্লাটফর্ম  বা মঞ্চ দিয়েছে যেখানে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ,কোনো মহৎ কাজের জন্য মানুষকে একত্রিত করা এবং বিপদে একে অন্যের পশে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে।

নেটওয়ার্কিং সাইট গুলি সেই না পাওয়ার জায়গা অনেকটাই ভরিয়ে রেখেছে ,ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে চোখ  রাখলেই পরিচিত জনেদের জীবনযাত্রা তাদের ভালো মন্দের খবর সবই হাতের নাগালে। দূর দেশে বসে থাকা প্রিয়জন হোক বা পছন্দের সেলিব্রিটি ,দেশবিদেশের খবর হোক বা চিকিৎসা পরিষেবা এই সবই এখন মানুষের কাছে অনেক সহজ হয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সাহায্যে। আসুন জেনেনি এই শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম গুলি  সম্মন্ধে জানা অজানা কিছু তথ্য।

 

বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট 

ফেসবুক - এই ওয়েবসাইটে একজন ব্যক্তি নিজের প্রোফাইল তৈরী করে নিজের বন্ধু ,আত্মীয় ,প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ,তাদের সাথে ছবি,ভিডিও,কোনো বিষয়ে নিজের মতামত ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারেন। এখানে সরাসরি পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করা ও তাদের জীবনযাত্রার সম্মন্ধে জানা যায়।  যেকোনো দেশ ,যেকোনো রাজ্য ,পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের খবরাখবর পাওয়ার ও যোগাযোগ করার সেরা মাধ্যম হল ফেসবুক। 

লিংকডইন - কর্মসংস্থানের খবরাখবর ও বিজনেস সংক্রান্ত যাবতীয় খবরের আদানপ্রদানই হলো এই সাইটটির প্রধান কাজ। বর্তমান দুনিয়ায় ছোট বড় সব রকম কাজের জন্য মানুষ এই সাইটের দ্বারস্থ হয়।

 

মাইক্রো ব্লগিং সাইট 

টুইটার - এটি একটি মাইক্রো ব্লগিং সাইট ,এখানে একজন ব্যক্তি যেকোনো সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর  ছোট ছোট পোস্ট করতে  বা নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন ,যেগুলিকে 'টুইট' বলা হয়। এই টুইট গুলির আয়তন ১৪০ অক্ষরের মধ্যে রাখতে হয় ও আপনি চাইলে কোনো তথ্যের  লিংক ও এখানে শেয়ার করতে পারেন।  এই সাইটের ব্যবহারকারীরা  একে অপরকে ফলো করে থাকেন এবং টুইটার টাইমলাইনে একে ওপরের টুইট দেখতে ও রিটুইট করতে পারেন।

 

ফটো শেয়ারিং সাইট 

ইনস্টাগ্রাম : ইনস্টাগ্রাম বর্তমানে ভীষণ জনপ্রিয় একটি মিডিয়া ,এটি সম্পূর্ণরূপে ভিজ্যুয়াল মাধ্যম ,অর্থাৎ এখানে একজন ব্যক্তি তার ছবি ,ভিডিও শেয়ার করতে পারেন  এবং তার ফলোয়াররা সেই ছবি দেখতে ও লাইক ও কমেন্ট করতে পারবেন। এখানে ছবি শেয়ার করার সময়  নানা রকম ফিল্টার ব্যবহার করে তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

স্ন্যাপচ্যাট - এটি একটি মেসেজিং অ্যাপ ,এখানে  ছবি ও ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে পাঠানো যায়  এবং সেই ছবিগুলি দেখার পরেই অদৃশ্য হয়ে যায়। বন্ধুদের সাথে ছবি শেয়ার করার আগে নানা রকম ফিল্টার ,লেন্স ও এফেক্ট ব্যবহার করা যায়।

পিন্টারেস্ট -এই ওয়েবসাইটটি একটি ভিজ্যুয়াল ডিসকভারি ইঞ্জিন ,এখানে নানা রেসিপি,হোম স্টাইল ইত্যাদির আইডিয়া পাওয়া যাবে।

 

ভিডিও শেয়ারিং সাইট 

ইউটিউব - এটি একটি ভিডিও শেয়ারিং সার্ভিস ,এই প্লাটফর্মটিতে যে কোনো ব্যক্তি নিজের অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে ভিডিও আপলোড ,শেয়ার ,লাইক ও কমেন্ট করতে পারে। এই সার্ভিসটি কম্পিউটার ,ল্যাপটপ,ট্যাব ও স্মার্ট ফোনে ব্যবহার করা যায়।

ফেসবুক লাইভ - এই সার্ভিসটি ফেসবুক শুরু করে ২০১৬ সালে ,এটি একটি লাইভ প্লাটফর্ম যেখানে মানুষ নিজেদের কাজ ,কোনো অভিজ্ঞতা সরাসরি অন্যদের সাথে শেয়ার করে নিতে পারেন।

 

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকারিতা 

বিশ্বায়নের যুগে সোশ্যাল মিডিয়াকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো খারাপ প্রভাব এখন আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং যে কতটা শক্তিশালী তার প্রমান আমরা বহুবার পেয়েছি। এখানে মানুষ যেমন নিজেদের আনন্দ ও দুঃখের খবর শেয়ার করে অন্যদের সাথে তা ভাগ করে নিয়েছেন তেমনই দেশে বিদেশে ঘটে যাওয়া অনেক ভালো ও খারাপ ঘটনায় তীব্রভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।

আমরা প্রায় সকলেই এখন কোনো তথ্য জানতে হলে গুগুল এর সাথে সাথে ফেসবুকেও পোস্ট দি কারণ এই সাইটটি কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করেন এবং কেউ না কেউ সেই বিষয়ে নিশ্চই কোনো সাহায্য করতে পারবেন এই ভরসা আমাদের আছে ।

নির্ভয়া কান্ড ও প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির ঘটনার পর  পর সোশ্যাল মিডিয়ায়  উপচে পড়েছিল মানুষের ক্ষোভ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে যা আইনি প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি গতি দিয়েছিলো সঠিক বিচারের জন্য  আবার এই বছরে অভিনেতা সুশান্ত সিং এর মৃত্যু রহস্য তোলপাড় করে দিয়েছিলো সোশ্যাল মিডিয়াকে।

দুহাজারকুড়ি বছরটা গোটা পৃথিবীর পক্ষেই  দুর্ভাগ্যজনক। মহামারীর কবলে পরে সারা বিশ্বেই মানুষ বিভ্রান্ত ও গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন ,এমত অবস্থায় প্রিয়জনদের খবর নেওয়ার ও তাদের চোখে দেখার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। তাছাড়া চিকিৎসা পরিষেবা ,ব্লাড ব্যাংকের খবর এগুলিও মানুষ এই সাইটগুলির দ্বারাই পেয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনও বর্তমানে এই নেটওয়ার্কিং সাইট গুলিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কারণ জনগণের কাছে পৌঁছনোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার এখনো কোনো বিকল্প নেই।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও সোশ্যাল মিডিয়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হোক , ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স মুভমেন্ট হোক বা আমাদের দেশের রাজনৈতিক চাপান উতোর সবই কিন্তু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছেন।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ,দেশের প্রধানমন্ত্রী এনারা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মানুষের ঘরে ঘরে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও এই সাইট গুলি প্রভাব ফেলেছে ,ছোট বড় সব কোম্পানি নিজেদের প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন ও বিপণন করার সুবিধা পাচ্ছে ,এছাড়া পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতারাও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভালো ব্যবসায়িক লাভ করছেন।

এই সব উপকারী দিক গুলির সাথে কিছু সমস্যার দিকও রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে

 ভ্রান্ত খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ,কোনো ব্যক্তির প্রোফাইল হ্যাক হয়ে যাওয়া ,দাঙ্গা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে কিছু পোস্ট দেওয়া ইত্যাদি এই সাইটগুলিতে অনেক সময় ঘটে তবে এইগুলি প্রতিরোধ করার জন্যও শক্তিশালী সিকিউরিটি সিস্টেম আছে যা এগুলো আটকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুধু ভারতবর্ষে নয় গোটা দুনিয়ায় ভীষণ ট্রেন্ডিং। সারা পৃথিবীতে ২০২০ সালে প্রায় ৩.৮১ বিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি ব্যবহার করছেন ,২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন অর্থাৎ এক বছরে ৯.২% ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পেয়েছে।( তথ্য -https://backlinko.com/social-media-users )। এই নেটওয়ার্কিং সাইট গুলির সাহায্যে মানুষ পরিচিত ,অপরিচিত মানুষের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ,ভার্চুয়ালি ও বাস্তব দুনিয়াতে মানুষের যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ছে  এবং সর্বোপরি মানুষ নিজের ভাবনা প্রকাশ করার ও অন্যের মতামত সরাসরি জানার সুযোগ পাচ্ছে এতে পারস্পরিক সংযোগ আরো শক্তিশালী হচ্ছে। যেকোনো আবিষ্কারের ভালো ও মন্দ দিক থাকে ,সোশ্যাল মিডিয়াও  ব্যতিক্রম নয় ,কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হলো একে সঠিক পথে ব্যবহার করা যাতে প্রযুক্তির অগ্রগতি সর্বদা মানবকল্যানেই নিযুক্ত হয়।

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ