ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

হাল ফ্যাশনের দুনিয়ায় সবচেয়ে সহজলভ্য কিন্তু জনপ্রিয় পোশাকটি হলো টিশার্ট। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের এক সদ্যজাত শিশু থেকে শুরু করে বলিউড হলিউডের নায়ক নায়িকা ,সাধারণ মানুষ এমনকি ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গ অবধি এই টিশার্টের অন্ধ ভক্ত। অত্যন্ত আরামদায়ক ও একইসঙ্গে কেতাদস্তুর এই পোশাকের প্রেমে গোটা বিশ্ব,কিন্তু এই দারুন ও বিভিন্ন  আকর্ষক ডিজাইনের  পোশাকটি  তৈরির পিছনে যে কত বড় ব্যবসায়িক কর্মকান্ড কাজ করে তা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনা। তাই আজকে আমরা টিশার্ট ডিজাইন কিভাবে করা হয় এবং পেশা হিসেবে এর সম্ভাবনাগুলো আলোচনা করবো।

 

কিভাবে টিশার্ট ডিজাইন এর ব্যবসা শুরু করবেন

টিশার্ট ডিজাইনে ও প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা খুবই লাভজনক। দেখে নেওয়া যাক এই কাজ শুরু করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

১) কোন বয়েসের কাস্টমারদের জন্য টিশার্ট বানাতে চান সেটা নিশ্চিত করুন ,অর্থাৎ  শিশু ,কিশোর কিশোরী ,প্রাপ্তবয়স্ক বা মাঝবয়সী করা আপনার টার্গেট ক্লায়েন্ট সেই বিষয় মনস্থির করুন।

২)এক বা একাধিক টিশার্ট ম্যানুফ্যাকচারার বা টিশার্ট প্রস্তুতকারকের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করুন।

৩) কিভাবে আপনার ডিজাইন করা টিশার্ট বিক্রি করবেন সিদ্ধান্ত নিন,অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করতে চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া বা ইকমার্স ওয়েবসাইট গুলির সাথে যুক্ত হন।

৪)আপনার অর্থ বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করছে যে আপনি একা কাজ করবে না একটি টিম বানিয়ে তাদের নিয়ে ব্যবসা করবেন তাই প্রথমেই বিনিয়োগের হিসেবে করে নিন ও তারপর কাজ শুরু করুন।

৫) মার্কেট রিসার্চ করুন ,নিজের তৈরি কিছু ডিসাইন বাজারে ছাড়ুন ও প্রতিক্রিয়া দেখুন তবেই আগামীদিনে কি ধরণের ডিজাইন করতে পারবেন তার একটা ধারণা তৈরি হবে।

৬)আপনার ডিসাইন কোম্পানির একটা নাম ঠিক করুন ,নাম এমন বাছতে হবে যাতে আপনার কাজ ও বক্ত্যব্য প্রকাশ পায় এবং একইসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষকও হয় তবেই আপনি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন।

৭)বাজারের অন্য টিশার্ট ডিজাইনারদের লক্ষ্য করুন ও সেই অনুযায়ী দাম স্থির করুন নাহলে দামের খুব বেশি তারতম্য হলে আপনি পিছিয়ে পড়তে পারেন।

৮) প্রথম থেকেই  কাস্টমাইজড টিশার্ট তৈরী করার চেষ্টা করুন ,তাতে আপনি কাস্টমারদের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী টিশার্ট ডিজাইন করলে আপনি সাধারণ টিশার্ট ব্যবসায়িদের তুলনায়  তাড়াতাড়ি ব্যবসায় উন্নতি করতে পারবেন।কাস্টমাইজড টিশার্ট ডিজাইনের অন্যতম বড় সুবিধা হলো একই ডিসাইন রিপিট হয়না এতে আপনার ক্রেতাও খুশি হন এবং ডিজাইনার হিসেবে আপনার কাজে তৃপ্তি আসবে।

টিশার্ট তৈরির ইতিহাস : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ডালভাত যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি নিত্যদিনের পোশাকের মধ্যে টিশার্ট এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য ,কিন্তু এই পোশাকটি কিন্তু খুব প্রাচীন নয়। পৃথিবীর মানচিত্রে ,ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আমেরিকান শ্রমিকরা গরমকালে তাদের কাজের জাম্পস্যুট কে কেটে আধখানা করে পড়তেন সেটাই ছিল টিশার্ট এর আঁতুরঘর। এর আগেও টিশার্ট তৈরি হয়েছিল কিন্তু তা ১৮৯৮ সালে মেক্সিকান আমেরিকান  যুদ্ধের পোশাকের ভিত পড়ার জন্য ,এরপর ১৯১৩ সালে আমেরিকান নেভির উনিফর্মের ভিত পড়ার  জন্য টিশার্ট তৈরি হতে শুরু করে। এর অনেকপরে ১৯২০ সালে টিশার্ট শব্দটি ইংরেজি অভিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই আমেরিকাতে এই পোশাক পড়ার চল শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে।( তথ্য সূত্র -https://www.realthread.com/blog/history-of-the-tshirt )

টিশার্ট এর বিভিন্ন ডিসাইন সহজলভ্যতা : সারা বিশ্বে সহজলভ্য পোশাকের তালিকায় টিশার্ট প্রথম। এই পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্য ও কম মূল্য একে  সব পোশাকের থেকে আলাদা করে। টিশার্ট এর সবথেকে আকর্ষক বিষয় হলো এর ডিজাইন। গোল গলা হোক বা কলার দেওয়া যেকোনো ধরণের টিশার্ট এর ওপর যে কোনো ডিজাইন করা যায় এবং সেটাই এই পোশাকের বিশেষত্ব। টিশার্ট সাধারণত গেঞ্জি কাপড়ের হয় ,এছাড়া সিনথেটিক ও সুতি মেশানো কাপড়ের টিশার্ট ও বাজারে পাওয়া যায় ,টিশার্টের সব থেকে বড় সুবিধা হলো যেকোনো রঙের হতে পারে ও তার ওপর যেকোনো ডিজাইন করা যায় ,বর্তমানে নানা ধরণের লেখা ,আঁকা টিশার্ট খুব জনপ্রিয়। তাছাড়া ,টিশার্ট এর দামও বেশ কম হয় ,সাধারণ মানুষের হাতের একদম নাগালে হওয়ায় এর  জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। আজকাল একজন ব্যক্তি টিশার্ট এর ওপর নিজের ইচ্ছামতো  ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন,তাতে কোনো সামাজিক বার্তা ,জনপ্রিয় গানের লাইন ,কার্টুন ক্যারেক্টার থাকতে পারে ,অথবা কোনো খেলার দলের জার্সি ,বিশেষ কোনো দিনের উল্লেখ ইত্যাদি নানা বিষয় টিশার্ট ডিজাইন করা সম্ভব। এর ব্যাপ্তি এতটাই বেশি যে মাঝে মাঝে বিতর্কও সৃষ্টি করে ,কিন্তু তাতে এর মাহাত্ম বা গৌরব বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয় না।

 

ভারতে টিশার্টের বাজার : বর্তমান  পোশাকের দুনিয়ায় টিশার্ট কেবলমাত্র একটি সহজলভ্য পরিধান হয়ে থেমে নেই ,এটি একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব,মনোভাব , চাহিদা ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। যতদিন যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ডিজাইনের টিশার্ট এর চাহিদা বাজারে বেড়েই চলেছে তাই এই সময় টিশার্ট ডিজাইনকে পেশা হিসেবে বেঁচে নেওয়ার আদর্শ সময়। টো১৮ সালে ভারতের লিডিং কনসালটেন্সি ফার্ম টেকনোপাক এডভাইজার প্রাইভেট লিমিটেড একটি সমকক্ষ প্রকাশ করে তাতে বলা হয় আগামী ১০বছরের মধ্যে ভারতের টিশার্ট ব্যবসা ২৩হাজার ২২১কোটি  টাকা থেকে বেড়ে ৬১হাজার ৯৫৪ কোটি তাকে পৌঁছবে। ( তথ্য সূত্র  -https://www.indiaretailing.com/2018/06/08/fashion/the-t-shirts-market-in-india/ )।

 

পেশা হিসেবে টিশার্ট ডিজাইনের সম্ভবনা : বাজারে টিশার্ট এর চাহিদাকে মাথায় রেখে টিশার্ট ডিজাইন করা একটা লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে ২০২৫ সাল অবধি এই ডিজাইনের বাজারের শেয়ার ৩১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে (তথ্য সূত্র -https://yourstory.com/mystory/tshirt-printing-business-idea-earn )।  ভারতেও এই ব্যবসার রমরমা শুরু হয়ে গেছে। ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত টিশার্ট ডিসাইন ও প্রিন্টিং কোম্পানি হলো -  WYO.in  ,  Bewakoof  ,Printland  ইত্যাদি। নামি কোম্পানি ছাড়াও অজস্র ছোট বড় কোম্পানি আছে যারা টিশার্ট ডিজাইন ও প্রিন্ট করে ভালো মুনাফা করছে  এবং এই কোম্পানি সব কোম্পানিগুলি প্রচুর নতুন ও অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনার নিয়োগ করেন ও মাইনেও ভালো পাওয়া যায়।

 

 

যেকোনো পেশাতেই লাভ ক্ষতি আছে ও থাকবে তাই সমস্ত পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করলেও প্রথমেই সাফল্য আশা করবেন না ,ধৈর্য্য ও একাগ্রতা নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে এবং সময়ের সাথে অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে মুনাফাও বাড়বে। সুতরাং আর দেরি না করে আজি আপনার শিল্পী সত্তাকে কাজে লাগান ও টিশার্ট ডিজাইনের কাজ শুরু করে দিন।

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ