ক্রমবর্ধমান শিল্পের সূচক বস্ত্রবয়ন শিল্প- বিশেষ প্রতিবেদন
প্রতিবেদন: বস্ত্র শিল্প আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বিরাট স্থান দখল করে আছে । দেশের প্রায় । ৫ কোটি মানুষ এই শিল্পের সাথে যুক্ত এবং বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। এই শিল্প দেশের মোট শিল্পোত্পাদনের ১৪% ও জিডিপি তে ৪% অবদান আছে। ভারতের মোট রপ্তানি ব্যবসার ১৫% এই বস্ত্র শিল্প থেকে হয়। বস্ত্র শিল্পের প্রধান অংশ হলো বস্ত্রবয়ন ,বিশ্বের আর কোনো দেশে ভারতের মতো বৃহৎ বস্ত্রবয়ন শিল্প নেই,এই শিল্প আমাদের দেশে অন্যতম বৃহৎ জন কর্মসংস্থান ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হয়। ভারতই একমাত্র দেশ যে এই শিল্পের দ্বারা নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বস্ত্রবয়ন শিল্পের ইতিহাস : পৃথিবীর প্রাচীনতম শিল্প ও ব্যবসা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বস্ত্রবয়ন। ভারতে প্রায় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে এই শিল্পের প্রচলন হয় এবং তখন থেকে নিয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত বয়ন শিল্প আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজরা ভারতে বস্ত্র বয়ন কে বৃহৎ শিল্পের আকারে শুরু করে ,তখন থেকেই বস্ত্র শিল্পের আমদানি ও রপ্তানি প্রথার প্রচলন হয় ও ইংরেজ শাসকেরা নিজেদের মুনাফার জন্য অনৈতিক পদ্ধতিতে বয়না শিল্পীদের অত্যাচার শুরু করে,এরপর গান্ধীজির চরকা আন্দোলন বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভারত তথা গোটা এশিয়া মহাদেশে বস্ত্রবয়নের জগতে এক আলোড়ন তৈরী করে যা পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতের বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতি কে ত্বরান্বিত করেছিল।
ভারতের বিখ্যাত কিছু বস্ত্র বুনন পদ্ধতি : ভারতবর্ষের মতো প্রাচীন দেশে বস্ত্র শিল্পের ইতিহাস খুবই ঐতিহ্যবাহী ,আমাদের দেশের বস্ত্র বয়ন শিল্পবিশ্ববিখ্যাত। আমাদের এই শিল্পে বস্ত্রের বৈচিত্রের সাথে সাথে বুনন শিল্পের ও বৈচিত্র অনেক ,জেনে নেওয়া যাক কিছু জনপ্রিয় বুনন ও বস্ত্রের নাম। খাদি ,কলমকারী ,বেনারসি ,চিকোনকারী,সম্বলপুরী ,ইক্কত ,চান্দেরি,পৈঠানি ব্রোকেড ,পাটলা,পশমিনা,ফুলকারী ,বন্ধনী,কান্জিবরাম,জামদানি,মুগা ইত্যাদি। এছাড়াও অগুনতি বুনন পদ্ধতি আছে যেগুলি বর্তমানে হয়তো খুব বেশি ব্যবহার হয় না বা প্রচলিত নয় তবে তার মাহাত্ম এদেরই মতো।
বর্তমান বস্ত্রবয়ন শিল্পের ক্রমবর্ধমান সূচক : সারা বিশ্বেই বস্ত্রবয়ন শিল্প একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা ,আমাদের দেশ এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ভারতের বস্ত্রবয়ন শিল্প প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা -সংগঠিত কারখানা ,বৈদ্যুতিক তাঁত ও হাতে বোনা তাঁত। ভারতে আনুমানিক ২.৫২ কোটি বৈদ্যুতিক তাঁত ও ২.৩৮ কোটি হাতে বোনা তাঁত আছে তবে ভারতের প্রায় ৮০% বস্ত্র শিল্পী অসংগঠিত। কারখানায় তৈরী হাওয়া কাপড় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাশনেবল জামাকাপড়ের বাজারকেই দখল করে থাকে। এছাড়া কাঁচা মালের প্রচুর যোগান ও সহজেই কম মূল্যের শ্রমিক উপলব্ধ হওয়ায় ভারতে বস্ত্র শিল্পের রমরমা ক্রমবর্ধমান। ভারতে বস্ত্র বয়ন শিল্পে স্বাধীন ব্যবসায়ী ও ছোট ছোট সংস্থার ভাগিদারী সর্বাধিক। দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্র (৩৯%),তামিলনাড়ু (২৩%) ও উত্তর প্রদেশ (১৫ %) সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বয়ন কারখানা অবস্থিত।
২০১৭ -২০১৮ সালে কমিশনার অফ টেক্সটাইল এর অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে ,ওই সময় ভারতে উলের বয়নও উৎপাদন ৪৮ হাজার ৮৮৪ কোটি বর্গ মিটার অবধি পৌঁছেছিল। বৈদ্যুতিক তাঁতের কারণেই এই সাফল্য এসেছে।দেশের বাকি বস্ত্র উৎপাদন হাতে বোনা তাঁত থেকেই হয়। এখানে সংগঠিত কারখানার সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে ধীরে ধীরে সেই সংখ্যাও বেড়ে উঠছে এবং তাদের উৎপাদন দেশের অর্থনীতিকে যথেষ্ট সাহায্য করছে। বলাযায় বৈদ্যুতিক কারখানায় এই কাজের সাথে যুক্ত প্রায় ৬০% মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে ,বাকিরা হস্ত শিল্পের বা তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত।
একটি সমীক্ষায় বলছে ,ভবিষ্যতে বস্ত্র বয়ন শিল্পের উর্ধগতি ২৫ % থেকে বেড়ে ৪০ কোটি টন হয়ে যাবে ,বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল ও শ্রমিকের যোগানও বেড়ে চলেছে তাই আগামী দিনে বস্ত্র শিল্পে ভারত প্রথম আসন অর্জন করবে এই স্বপ্ন বেশিদিন অধরা থাকবে না।