ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

পৃথিবী যত দ্রুত বদলাচ্ছে ততই বদলাচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ও অভ্যাস। মানুষের খাদ্যাভ্যাসও এসেছে আমূল পরিবর্তন ,নিত্যদিনের কাজের চাপ মানুষের শরীর ও মনের ভারসাম্যকে নষ্ট করে ক্ষতি সাধন করছে ,তাই বর্তমানে ডাক্তার ও স্বাস্থবিদরা সকলকে স্বাস্থ্যসম্মত ,কেমিক্যাল মুক্ত জৈব  ফল ও শাক সবজি খেতে  বলছেন।

শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ফল খাওয়ার উপকারিতা আমরা সেই আদিকাল থেকেই জেনে আসছি ,তাই সারা বছরই আমাদের দিনের খাদ্য তালিকায় এক বা একাধিক মরশুমি ফল অবশ্যই থাকে ,সেই ফলেদের দলে নতুন সংযোজন হলো ড্রাগন ফ্রুট বা ড্রাগন ফল।

 

ড্রাগন ফলের কার্যকারিতা 

সারা বিশ্বে ও ভারতবর্ষে  ড্রাগন ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে উঠছে এর স্বাস্থ্যকর গুনাগুনের জন্য। দেখে নেওয়া যাক এই ফলের কিছু উপকারী দিক।

১) ডায়বেটিস কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে।

২) ড্রাগন ফল কোলেস্টরলের সমস্যা কমায়।

৩) এই ফলে ফ্যাট ও প্রোটিন বেশি থাকে।

৪) এটি উচ্চ আন্টি অক্সিডেন্ট।

৫) ড্রাগন ফ্রুট আর্থারাইটিস কম করে। 

৬) হৃদ রোগের সমস্যা কমায়।

৭) পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে।

৮) শ্বাস কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

৯) ওজন কম করে।

১০) বার্ধক্য গতি হ্রাস করে। 

 

ভারতে ড্রাগন ফলের চাষ বা উৎপাদন 

আমাদের দেশে ড্রাগন ফ্রুট খুব বেশিদিন পা রাখেনি ,বছর পাঁচেক আগে তো অনেকে এর নামও জানতেন না কিন্তু বর্তমানে ভারতের শহরাঞ্চলে ড্রাগন ফ্রুট খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ,ভারতে এই ফল থাইল্যান্ড ,ফিলিপিন, ভিয়েতনাম,ইসরায়েল ও শ্রীলংকা  থেকে আমদানি করা হয় তবে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে। এই ফলের প্রধানত তিনটি ধরণ আছে ,১) গোলাপি  রঙের খোলস ও ভিতর টা সাদা ,২) গোলাপি রঙের খোলস ও ভিতর লাল এবং ৩) হলুদ রঙের খোলস ও ভিতর সাদা। ভারতে অবশ্য প্রথম ধরণের ফলটিই বিখ্যাত।

ভারতে মহাৰাষ্ট্ৰেই এই ফলের সর্বাধিক চাষ বা ফলন হয়ে থাকে এবং এখন থেকে বছরে ৩০-৩৫ টন ড্রাগন ফ্রুট উৎপাদন হয়।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু এই ফলের জন্য সবচেয়ে উপকারী ,খুব উর্বর মাটি না হলেও চলে এই ফলের উৎপাদনের জন্য। এই ফলের জন্য বার্ষিক ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি ও ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজনীয় ,খুব বেশি রোদ এই ফলের ক্ষতি করতে পারে। উচ্চ রৌদ্র বিশিষ্ট অঞ্চলে এই গাছের ওপর ছায়া দেওয়ার প্রয়োজন। এক একর  জমি তে প্রায় দুই হাজার গাছ লাগানো যেতে পারে এবং সাধারণত প্রতিটি গাছ ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত  সবচেয়ে  ভালো  ফলন দেয় |

ড্রাগন ফলের উৎপাদনের জন্য প্রায় সব রকমের মাটিই ব্যবহার হতে পারে ,কাদা মাটি থেকে শুরু করে বালি মাটি পর্যন্ত এই ফলের উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তবে উপযুক্ত জৈব সার ব্যবহার করে বালি মাটি তে সবচেয়ে ভালো ফলন হতে পারে। মাটির পি এইচ লেভেল  ৫.৫ থেকে ৭ হলো  সবচেয়ে ভালো। জৈব সার এই গাছের  বেড়ে ওঠার  প্রধান উপকরণ ,প্রতিটি গাছের জন্য ১০ থেকে ১৫ কেজি জৈব সার ও জৈব ফার্টিলাইজার প্রয়োজন। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতি বছর  ২ কেজি জৈব ফার্টিলাইজার বাড়ানো হয়ে থাকে। গাছে ফল ধরার সময় মাটিতে বেশি পরিমানে নাইট্রোজেন ও ফসফেট দেওয়া হয়। ড্রাগন ফ্রুটের ক্ষেতে এপ্রিল মাস নাগাদ গাছে ফুল ধরে ,জুলাই অগাস্ট মাসে ফল ধরে এবং ডিসেম্বর মাস অবধি ফল বড় হয়ে ওঠে ও  ব্যবহারের জন্য পেড়ে নেওয়া হয়। 

 

ভারতে ড্রাগন ফ্রুটের ব্যবসা : ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ড্রাগন ফ্রুট ইদানিং খুবই লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। পাঞ্জাব ,হরিয়ানা বা কর্ণাটক তেলেঙ্গানা সব জায়গাতেই এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে এবং দেশে বিদেশে রপ্তানিও শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে শুধু মহারাষ্ট্র ও আসামে এর ফলন হতো কিন্তু এখন বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে সব রাজ্য বা প্রদেশেই এই ফলের চাষ করার ঝোঁক বেড়েছে।পূর্বে ড্রাগন ফল শুধু আমদানি করা হতো কিন্তু উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে দেশেই এই ফলের ফলন বাড়ছ। এই ফলের উৎপাদন যেহেতু ব্যবসায়িক উৎপাদন তাই সাধারণত এক একর জমির বা দুই হাজার ড্রাগন ফলের গাছের জন্য অন্তত একজন সুদক্ষ কৃষক প্রয়োজন।যদি একজন ব্যক্তি ভারতে ড্রাগন ফলের চাষ করতে চান তাহলে তার মোট খরচ হতে পারে -

১) জমি ভাড়া বা লিজ বাবদ খরচ ১ লক্ষ্য ৫০ হাজার টাকা

২) কৃষকের মজুরি -৬০ হাজার টাকা

৩) টি সাপোর্ট সিস্টেম খরচ -২ লক্ষ্য টাকা

৪) পেস্টিসাইড খরচ -১০ হাজার টাকা

 ৫) আনুষঙ্গিক খরচ- ৬৫ হাজার টাকা

 

অর্থাৎ এক একর জমির ওপর এই ফলের চাষ করতে একজনের প্রায় ৫ লক্ষ্ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। প্রতি একর থেকে প্রায় ৫ -৬ টন ড্রাগন ফ্রুট উৎপন্ন হয় এবং বাজারে এর মূল্য কমবেশি ২০০ টাকা প্রতি কেজি হয়ে থাকে।  দেখা যায় যে চাষের পর সমস্ত খরচ বাদ দিয়েও ৪.৫০ লক্ষ্ টাকার মুনাফা প্রথম দুই বছরেই হয়ে যায়। 

পরিশেষে বলা যায় যে এই ফলের চাহিদা  বাজারে যেমন প্রতিদিন বেড়ে চলেছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ড্রাগন ফল চাষ করার প্রবণতা ,দেশে বিদেশে এই ফলের বাজার ক্রমেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে আর সেই সঙ্গে  বাড়ছে অর্থের লেনদেন।তাই সেইদিন দূরে নেই যেদিন ড্রাগন ফলের প্রচুর ফলন আমাদের দেশেই হবে আর বিদেশ থেকে এই ফল রপ্তানি করতে হবে না ,ফলে সাধারণ মানুষের কাছেও এই ফলটি সহজলভ্য হবে।

 

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ