বাড়ন্ত বাচ্চাদের স্বাস্থ্যঃ বিশেষ প্রতিবেদন
প্রত্যেক প্রজন্মেরই তার আগের প্রজন্মের সাথে কিছু মিল ও কিছু অমিল সবসময়ই থাকে ,তাই নিয়ে তর্ক বিতর্কও থাকে কিন্তু কিছু বিষয় এমন হয় যেটা সর্বকালেই প্রাসঙ্গিক । সেই রকমই একটি বিষয় হল বাড়ন্ত বাচ্চাদের স্বাস্থ্য ।
বিশ্বের সব বাবা মায়েদের কাছে তাদের সন্তানের শরীর স্বাস্থ্য একটা অত্যন্ত গভীর চিন্তার জায়গা ,সেখানে ধনী দারিদ্র ভেদাভেদ প্রায় নেই বললেই চলে । একটি শিশুর জন্মের পর মুহূর্ত থেকে তার সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য চাই নিশ্ছিদ্র মনোযোগ ,সঠিক খাওয়া দাওয়া ও যত্ন ।
বাড়ন্ত বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই সচেতনতা ১৯ শতক ও ২০ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত মোটেই ছিল না এবং স্বভাবতই শিশু চিকিৎসকদেরও প্রবর্তন হয়নি ,পরবর্তীকালে চিকিৎসাবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে ক্রমেই বাচ্চাদের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছয় । সাধারনত, সদ্যজাত শিশু থেকে বয়ঃসন্ধির সময় কালকেই বাচ্চাদের বেড়ে ওঠার সময় বলে ধরা হয় । এই সময়কালে বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এর বিকাশ ঘটে তাই এই সময় তাদের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন।
বর্তমান যুগের অধিকাংশই অনুপরিবার এবং মা বাবা দুজনেই কর্মরত ফলে বেশিরভাগ শিশুই তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ থেকে বঞ্চিত । সেক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যের যাতে অবনতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ ।বেড়ে ওঠার সময় বাচ্চাদের প্রতিদিনের খাবারে ভারসাম্য থাকা আবশ্যিক নাহলে তাদের বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে উপরন্তু এখন মহামারির যে আবহ তৈরি হয়েছে তাতে শিশুদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাড়ন্ত বাচ্চাদের শরীর ও স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে
সুষম আহার
মানব শরীরে পিটুইটারি গ্লান্ত থেকে নিঃসৃত হিউম্যান গ্রোথ হরমোন শিশুদের বেড়ে ওঠার সহায়ক । আমাদের উচিৎ শিশুদের এমন খাবার দেওয়া যাতে এই হরমোনটি সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে ,যেমন - ভাত,নানা রকম ডাল, সবুজ সবজি ,মরশুমি ফল রুটি এবং সেই সঙ্গে প্রাণীজ প্রোটিন যথা - মাছ ,মাংস্ ,ডিম,দুধ ইত্যাদি । এই সব খাবার বাচ্চাকে বয়ঃসন্ধি অব্ধি খাওয়ানো উচিৎ ।
শারীরিক কসরত
শিশুদের ২ বছর বয়েস পার হলেই তাদের নানা রকম শারীরিক কসরত বা খেলার দিকে উৎসাহিত করা দরকার কারন শিশুদের শরীরে খাবার থেকে যে এনার্জি বা শক্তি তৈরি হয় সেটির সঠিক ব্যাবহার না হলে তা বিকাশে বাধা হতে পারে । শিশুকে ফুটবল,ক্রিকেট এর পাশাপাশি দৌড়ানো, সাঁতার , নাচ ইত্যাদিতেও উৎসাহ দিন ।
ইতিবাচক পরিবেশ
শিশুদের বেড়ে ওঠায় ইতিবাচক পরিবেশের ভুমিকা অনস্বীকার্য । বাচ্চার শরীর জন্মের সময় থেকে কৈশোর কাল পর্যন্ত অজস্র পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় তাই পরিবারের মাথায় রাখতে হবে যে শিশুটি যেন একটা সুস্থ পরিবেশের মধ্যে বড় হয়, কোনোরকম বিরূপ অভিজ্ঞতা তার ভবিষ্যতকে আঘাত করতে পারে । পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও তার দৃষ্টি আকর্ষণ করুন,লেখা পড়ার তিরিক্ত চাপও কিন্তু বাচ্চার বেড়ে ওঠার পথ রোধ করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম
একটি শিশুর বিকাশে তার ঘুমের ঘাটতি কিন্তু ন্তরায় হতে পারে । বাড়ন্ত বাচ্চাদের অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন কারন এটি প্রমাণিত যে ঘুমের মধ্যেও মানব শরীরের বিকাশ হয় । ন্যাসানাল স্লিপ ফাউন্ডেশন এর ২০১৫ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুদের ১০-১৩ ঘণ্টা, ৬ থেকে ১৩ বছরের বাচ্চাদের ৯-১১ ঘণ্টা এবং বয়ঃসন্ধির বাচ্চাদের ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন ।
শিশুদের সুস্থ ভাবে বড় হয়ে ওঠার আরও অনেক কারন থাকে ,তবে তাদের সার্বিক বিকাশে মা বাবা এবং পরিবারের একাগ্র মনোযোগ ,যত্ন ও ভালবাসা সবথেকে বেশি কার্যকরী ।