ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

প্রতিদিন আমাদের দেশে বেড়ে চলেছে নারীদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের হার। কোনো ভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছেনা। দিল্লী, তেলেঙ্গানা বা হাথরস থেকে শুরু করে আমাদের রাজ্যের কামদুনি বা অন্য কোথাও৷ কিছু কিছু ঘটনায় তোলপাড় পড়ে যায় সমাজে। নড়েচড়ে বসে সবাই। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে মিডিয়া, রাজনীতিবিদরা সবক্ষেত্রেই প্রবল হিল্লোল লাগে। জেগে ওঠে সাধারণ মানুষও। তার কিছুদিন পরই সব চুপ,শান্ত। ঘটেই চলে একের পর এক অপরাধ।

বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলে থাকেন, আইন আদালত পুলিশ দিয়ে এই সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য চাই মানসিকতার আমূল পরিবর্তন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষকে সম্মান করা তার ব্যক্তিমত, ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সর্বোপরি লিঙ্গ, যৌনতা ইত্যাদি নিয়ে অজ্ঞতার অবসান ঘটানো। তবেই এই প্রবণতা কিছু কমতে পারে। কারণ তাদের মতে আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই যৌনতা সম্পর্কে বাস্তব থেকে অনেক দূরতর ভুল ধারণা পোষণ করেন। আমাদের সমাজে সেক্স সম্পর্কে যে বিরাট ট্যাবু রয়েছে তাই এই অস্পষ্টতার কারণ। আর সেই অস্পষ্টতা থেকেই অজ্ঞতা, অজ্ঞতা থেকে যৌনতার অবদমন ও কু-মানসিকতার জন্ম।

 

আমাদের দেশের প্রাচীন মন্দির বা নানা স্থাপত্যে যৌনতার নানা ভঙ্গি শিল্প হিসেবে খোদাই করা রয়েছে অথচ সেই দেশেই যৌনতা নিয়ে চারিদিকে চরম লুকোচুরি, অজ্ঞানতা তা সত্যিই আশ্চর্যের। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সহ নানা 'আধুনিক' দেশে যৌনতা অনেক সহজ ও স্বাভাবিক একটু বিষয়। সেখানে অত রাখঢাক নেই, সমাজের কড়া বাঁধনও নেই। অথচ সেইসব দেশে মহিলাদের উপর জোর খাটানো, যৌন হেনস্থা, ধর্ষন ইত্যাদির সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু কেন? সমাজতত্ত্ববিদরা মনে করছেন এর জন্য দায়ী যৌনতা সম্পর্ক সুস্থ সচেতনতা ও ধারণা। আর তা সম্ভব হয় একেবারে শিশুবয়স থেকেই নির্দিষ্ট পাঠক্রমের মাধ্যমে সেক্স এডুকেশনের মাধ্যমে। তাই সবক্ষেত্রেই একেবারে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই সেক্স এডুকেশন খুব জরুরি। 

 

শিশুবয়স থেকেই মূলত সেক্স এডুকেশন জরুরি দুটো কারণে

প্রথমত, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সকলকে শ্রদ্ধা করা এবং অপরের মতকে সম্মান করার শিক্ষার পাশাপাশি যৌন শিক্ষার ফলে মেয়েদের মধ্যে ছোট থেকেই তার শরীর সম্পর্কে এক সচেতনতা সৃষ্টি হয়। গুড টাচ-ব্যাড টাচ সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হয়৷ এর ফলে শৈশবের সুযোগে যে শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহ করা হয় তারা তা ঠেকাতে সক্ষম হবেন। প্রতিবাদের সুযোগ তৈরি হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে যৌনতা নিয়ে যে নানা ভুল ধারণা তার অবসানের মাধ্যমে বিকৃতকাম প্রবণতা ঠেকানো সহজ হবে।

দ্বিতীয়ত,  কেবম মেয়েরাই নিগৃহীত হন তাও তো নয়। অনেক পুরুষও নিগৃহীত হন। তারাও সচেতন হবেন। সমকামিতা নিয়েও সমাজে যে অদ্ভুত ট্যাবু আছে ধাক্কা দেওয়া যাবে তাতেও। অনেকেই মনে মনে অন্য লিঙ্গের অনুসারী হলেও বিপরীত শরীর নিয়ে কার্যত অন্য মানুষের জীবন যাপন করতে বাধ্য হন শিশুবয়স থেকে, তারাও তাদের বাস্তবিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হবেন, নিজের ইচ্ছেমত জীবন যাপনের ক্ষেত্রে খানিকটা অগ্রসর হতে পারবেন।

 

এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে অবিভাবকদের

মনে রাখবেন ছোট থেকেই শিশুদের কাছে যৌনতা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি এড়িয়ে না গিয়ে তাদের বোঝার মত করে জবাব দিতে পারলেই ভালো। শৈশবে নানা বিষয়ে কৌতুহল তৈরি হয়, সেগুলির নিরসন না হলে নানা ভুল ধারণা জন্মাতে থাকবে৷ এও মনে রাখা দরকার যে, অর্ধসত্য মিথ্যের চেয়েও ভয়ংকর। তাই ছোটদের কাছে লুকোবেন না বা বানিয়ে বলবেন না। যেটুকু বলা যায় তাদের বোঝার মত করে বলুন, তাকে সচেতন করুন।

 

একটু বড় হলেই ছেলে মেয়ে উভয়কেই মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। তাদের বোঝানো দরকার যে এটা স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তাদের ধীরে ধীরে বোঝানো  দরকার সুরক্ষিত যৌনতার গুরুত্ব সম্পর্কেও। কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিতে আজকাল ইন্টারনেটের সূত্রে নানা প্রাপ্তবয়স্ক ছবি বা ভিডিওর সামনাসামনি ছেলেমেয়েরা হয়। তাদের উৎসাহও বাড়ে সেগুলি সম্পর্কে। এইসব নিয়ে তিরস্কারের পথে না গিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা দরকার। জানা দরকার সে কিভাবে ভাবছে। সেই ভাবনায় কোনো বিকৃতি লক্ষ করলে সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

 

এইসব কারণেই ছোট বয়স থেকেই স্কুলে এবং তারও আগে বাড়ি থেকেই বাবা মা বা অন্য অভিভাবকদের হাত ধরে সেক্স এডুকেশনের প্রাথমিক পাঠ পাওয়া প্রয়োজন তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য।  কারণ মনে রাখতে হবে কোনো বিষয়ে যত নিষিদ্ধতা থাকে তার প্রতি কৌতুহল ও ভুল ধারণা কিন্তু ক্রমেই বাড়তে থাকে।

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ