আত্মসুরক্ষা - মায়েদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন
২০১২ সালে আসমুদ্র হিমাচল একসাথে কেঁপে উঠেছিল এক পাশবিক ঘটনায় ,আমরা সবাই সেই ভয়াবহ ঘটনার প্রকোপে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম ,শুধু আমাদের দেশ নয় গোটা বিশ্বে উঠেছিল তীব্র নিন্দার ঝড়। ঠিকই ধরেছেন ,আমি 'নির্ভয়া কাণ্ডের ' কথাই বলছি কিন্তু এই নির্মম ঘটনার পরেও মেয়েদের প্রতি আক্রমণ বিন্দুমাত্র কমেনি বরং বেড়েছে। একুশ শতাব্দীতে যেখানে সারা পৃথিবী জুড়ে নারী স্বাধীনতা ও নারী সুরক্ষার কথা প্রচারিত হচ্ছে সেখানে ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন দেখে অবাক হতে হয়। এখনো আমাদের দেশে মেয়েদের প্রতি কোনো অপরাধ ঘটলে তার দায় সেই মেয়েটির উপরেই বর্তায় এবং সমাজের এই নির্মমতায় অনেক মেয়েই নিজের মানসিক ভারসাম্য হারায়।
এছাড়া বর্তমানে নারীরা সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে অংশগ্রহণ করছে ,তাদের লেখাপড়া ,চাকরি ,কাজকর্ম সব কিছুর জন্যই বাইরের জগতে বেরোতে হয় ,কিছু নিকৃষ্ট মানসিকতার জীবের জন্য তাদের পক্ষে নিজেদের জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় ,বাড়িতে বসে থাকাও সম্ভব নয়। এর সাথে অবশ্যই সাইবার হ্যারাসমেন্ট এর কথা বলতেই হয় ,মেয়েরা যে শুধু শারীরিক দিক থেকেই আক্রান্ত হয় তা নয় বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট এর দৌরাত্বে সাইবার ক্রাইমের শিকার হয় এবং বহু মেয়ে নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে বসে,পুলিশ প্রশাসন থেকে সবসময়েই মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু কিছু ঘটনার ওপর কারুর নিয়ন্ত্রণ থাকে না , তাই এখন মেয়েদের উচিত আত্মসুরক্ষার দায়িত্ব নিজের হাতেই তুলে নেওয়া। আজ আমরা সেই বিষয়েই কথা বলবো ,মায়েরা ,মেয়েরা কিভাবে যেকোনো বিপদে আত্মরক্ষা করবেন রইলো সেই নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
নারীদের আত্মসুরক্ষার কিছু পদ্ধতি
মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ : দৈনন্দিন জীবনে রাস্তা ঘাটে হয়রানির শিকার হননি এমন মেয়ে খুঁজে পাবেন না,ভালো মানুষের সাথে খারাপ মানুষের সংখ্যাও কিছু কম নেই তাই নিজের সুরক্ষার জন্য আজই মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করুন ,এখন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার দুইয়ের তরফ থেকেই এই ধরণের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা আছে তবে আপনি চাইলে প্রাইভেট কোচিং ও নিতে পারেন।এর ফলে আপনার শারীরিক শক্তি বাড়ার সাথে সাথে মানসিক শক্তিও বাড়বে।
পথে ঘাটে সচেতন থাকুন : পড়াশুনার জন্য হোক বা কর্মস্থানে যাওয়া আসা ,যখনই বাড়ি থেকে বেরোবেন চোখ কান খোলা রাখুন ,রাস্তায় বেরিয়েই কানে হেডফোন গুজবেন না ,হয়তো আপনার অসাবধানতার সুযোগ নেওয়ার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে।
ব্যাগে ছোট অস্ত্র রাখুন : বিপদ কখন কিভাবে আসবে কেউ জানে না ,তাই আপনার নিত্যদিনের ব্যবহারের ব্যাগে ছোট খাটো অস্ত্র রাখুন ,যেমন পেপার কাটার ,পেপার স্প্রে ,চাবি ইত্যাদি ,শুনতে অবাক লাগলেও অনেক মেয়েই সময়মতো এগুলি ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে।
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন : যখন কোনো কাজে যাচ্ছে বা কাজ থেকে ফিরছেন জন পরিবহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে করুন ,অনেক লোকজনের মাঝখানে আপনার সাথে খারাপ কিছু ঘটার সম্ভবনা কম,বিশেষ করে ফিরতে রাত হলে ট্যাক্সি বা ক্যাবের বদলে বাস নিন। যারা খারাপ কিছু করার উদ্যেশ্য রাখবে তারা লোকজনের মাঝে কিছু করার সাহস পাবে না।
সুনসান পথ এড়িয়ে চলুন : আমরা অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য বড় রাস্তা ছেড়ে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা পছন্দ করি কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ঐসব পথে বিপদে পড়লে সাহায্য করার মতো কাউকেই পাওয়া যায় না তাই সময় একটু বেশি লাগলেও মেয়েদের উচিত বড় রাস্তাই ব্যবহার করা।
দরকারি নাম্বার স্পিড ডায়াল এ রাখুন : এখন প্রযুক্তির যুগ,নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্মার্ট ফোনে নিজের পরিজনের ,বন্ধুদের নম্বর স্পিড ডায়াল এ রাখুন যাতে যে কোনো দরকারে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এছাড়া আজকাল সব স্মার্ট ফোনে প্যানিক বাটন থাকে ,বিপদের সময় ওই বাটন প্রেস করলে আপনার লোকেশন আপনার প্রিয়জনের কাছে চলে যাবে ও তারা আপনাকে সাহায্য করতে আসতে পারবেন।
আগামীদিনে কি হতে পারে সেই নিয়ে যদি মেয়েরা সবসময় আতঙ্কে থাকে তাহলে সেটা আমাদের সমাজের তথা দেশের দুর্ভাগ্য ,নারী পুরুষ উভয় মিলেই আমাদের জীবনযাত্রার ভারসাম্য আসে ,তাই মেয়েদের সুরক্ষার দায়িত্বও সবারই ,এই কথা যদি আমরা সবাই মেনে চলি তাহলেই নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ ধীরে ধীরে কমে আসবে ও মেয়েরা স্বসম্মানে এগিয়ে চলবে।