ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া- হস্তশিল্পের বিপুল সমাহার
ভারতবর্ষের মতো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দেশ গোটা পৃথিবীতে আর একটিও আছে কিনা সন্দেহ ,আমাদের দেশের মতো শৈল্পিক পারদর্শিতা খুব কম দেশের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। ভারতবর্ষ নিয়ে এই কথা বহু বছর আগে কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায় যথার্থই বলেছিলেন- " সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি " । ভারতীয় শিল্পকলা পৃথিবী বিখ্যাত এবং এর মধ্যে প্রধান ও উল্লেখযোগ্য হলো হস্তশিল্প। ভারতীয় হস্তশিল্পের সম্ভার চোখ ধাঁধানো এবং তা আমাদের দেশের সামাজিক,অর্থনৈতিক ও নৈতিক চরিত্রের ওপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে।
ভারতের হস্তশিল্পের গুরুত্ব ও ভূমিকা
হস্তশিল্পের ভূমিকা একটি দেশের ঐতিহ্য ,সংস্কৃতি ও ইতিহাস গড়ার পিছনে অপরিসীম। আমাদের জীবনযাত্রায় এর ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট,সকালের চায়ের কাপ রাখার কোস্টার থেকে সবজি কেনার পাটের ব্যাগ কিংবা ঘরের কোনের সৌখিন ফুলদানি হোক বা দরজার পাশের কি হোল্ডার সবই এই হস্তশিল্পের মহিমা। অর্থাৎ আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার যোগ্য জিনিসই হোক বা আমাদের রুচির পরিচয় বাহক কোনোকিছু ,সবেতেই হস্তশিল্প। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরেও হস্তশিল্পের প্রভাব খুব বেশি ,আমাদের রপ্তানি ব্যবসা অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
২০১৩ সালের একটি গবেষণা পত্র (ভারতীয় হস্তশিল্পের বর্তমান চিত্র ,লেখক -দিলীপ কুমার ও পি ভি রাজীব,https://www.trp.org.in/issues/present-scenario-of-indian-handicraft-products-2 ) অনুযায়ী ভারতে প্রায় ৬৭ লক্ষ শিল্পী হস্তশিল্পের জগতে কাজ করেন এবং হস্তশিল্পের রপ্তানি তে ভারত পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য স্থানে অবস্থিত। ভারতের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়া শুরু হয় ৯৮-৯৯ সালে রপ্তানি থেকে ,ওই সময় প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ্য আমেরিকান ডলার দেশের হস্তশিল্প থেকে আয় হয়েছিল।ভারতের যে বিভিন্ন হস্তশিল্প বিদেশে রপ্তানি হয় সেগুলির মধ্যে প্রধান হলো - হাতে বোনা ও আঁকা বস্ত্রশিল্প ,মাটি ও ধাতুর তৈরী শিল্প দ্রব্য ,হাতে তৈরী গহনা ,কাঠের শিল্পকর্ম এছাড়া পাথর ও কাঁচের তৈরী দ্রব্য ইত্যাদি ।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিখ্যাত হস্তশিল্প : ভারতের সব রাজ্যের ও প্রদেশের হস্তশিল্পের ধরণ আলাদা ও অনন্য ,দেখে নেওয়া যাক কোন রাজ্যের বিখ্যাত হস্তশিল্প কোনগুলি।
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত হস্তশিল্প : টেরাকোটা (বিষ্ণুপুর ) , ডোকরা (বাঁকুড়া ), বেত ও মাদুর শিল্প (মেদিনীপুর),কাঠের পুতুল (নতুনগ্রাম ,বর্ধমান) এই সবই আমাদের রাজ্যের বিখ্যাত হস্তশিল্প যা রপ্তানি করে আমাদের অর্থনীতির ভীত মজবুত হয়।
কাশ্মীর : পশমিনা সাল ও অপূর্ব কারুকাজের কাঠের আসবাব হলো এই স্থানের বিশেষত্ব ,বিদেশিরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এই দ্রব্য গুলি নিজেদের দেশে নিয়ে যান।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা : এখানকার সবচেয়ে খ্যাত হস্তশিল্প হলো ফুলকারী ,এই সেলাই পদ্ধতি খুবই বিখ্যাত এবং কঠিনও।
রাজস্থান : রাজস্থানের সবচেয়ে বিখ্যাত হলো পাথর ও ব্রাস এর শিল্পকর্ম ,এই কাজ খুবই পরিশ্রমের ও সময় সাপেক্ষ কিন্তু রাজস্থানের শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে চলেছেন।
আগ্রা : শ্বেত পাথরের শিল্পকর্মের জন্য আগ্রা বিখ্যাত ,এই কাজ সারা পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও আমাদের দেশের রপ্তানিতেও সিংহভাগ দখল করে আছে।
উড়িষ্যা : উড়িষ্যার বিখ্যতাও হস্তশিল্প হলো পটচিত্র ,অপূর্ব সব রং ব্যবহার করে পূরণের গল্প গুলিকে পটের ওপর আঁকা হয় ,এটি অত্যন্ত প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী শিল্পকর্ম।
মহারাষ্ট্র : এখানকার বিখ্যাত সৃষ্টি হলো চর্মশিল্প যা সারাদুনিয়ায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
বিহার : মধুবনী চিত্র ও শিল্পকর্ম এখানকার অপূর্ব হস্তশিল্প ,সারা ভারত তথা বিশ্বে এই শিল্পের চাহিত তুঙ্গে।
এই হস্তশিল্প গুলি ছাড়াও ভারতে আরো কিছু শিল্পকর্ম বিখ্যাত ,সেগুলি হলো বিদ্রী(কর্ণাটক),লিপ্পান কম (কুচ) ও পুতুলনাচ (রাজস্থান)। আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও পরম্পরার বাহক এই সব শিল্পকলা আরো এগিয়ে চলবে ,ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরো মজবুত করবে এটাই কাম্য।