কিভাবে ভালো মানের বীজ নির্বাচন করবেন
ভারত কৃষিনির্ভর দেশ৷ চাষবাসের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি। দেশের মানুষের খাদ্যের ভান্ডারে যেন কখনও অভাব না দেখা দেয় তার জন্যেও কৃষিকজের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হয় আপামর বিশ্ববাসীকে।
আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা কৃষিকাজের সবচেয়ে বুনিয়াদি বিষয়। যেটির গুণগত মান না ভালো হলে কোনোভাবেই আপনি উন্নতি করতে পারবেন না কৃষিকাজে। সেটি হল - বীজ।
উন্নতমানের বীজই বেশি পরিমাণ ও উচ্চগুণমান সম্পম্ন ফসল ফলাতে সহায়ক হয়। তাই কৃষকের কাছে ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে সঠিক গুণমান সম্পন্ন বীজ নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু কিভাবে এই বীজ নির্বাচন করা যায় ?
এমনিতে এর জন্য সরকার নানা সময়ে কৃষকদের নিয়ে নানারকম ওয়ার্কশপ, সচেতনতা শিবির ইত্যাদি করে। সরকার গুণমাণে উন্নত বীজ বিক্রিও করে। বাজারেও নজরদারি চলে যাতে খারাপ মানের বীজ না বিক্রি হতে পারে। এমনিতে ভালো কোম্পানির বীজের মাণ সাধারণত কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসায়িক রেপুটেশনের স্বার্থেই ভালো রাখেন৷ দামের হেরফেরের উপরেও বীজের মান নির্ভর করে। তবু কৃষকদের জেনে রাখা দরকার কিভাবে বীজের গুণমাণ সম্পর্কে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে।
উন্নত গুণমান সম্পন্ন বীজে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়, তা হল -
- বীজের স্বাভাবিক রং ও সতেজতা
- বীজের দানা হবে বড় ও পুষ্টি কর।
- বীজদানা হতে হবে রোগ মুক্ত, পোকা মাকড় লেগে থাকলে হবে না
- ধান,গম এর মত বীজের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা পরিমান হওয়া দরকার সর্বোচ্চ ১২%, তবে অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা পরিমান হওয়া দরকার সর্বোচ্চ ১০%।
- অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা ৭০-৮৫% এর উপরে হতে হবে।
- এছাড়াও বাহ্যিক দিক থেকে বীজের স্বাভাবিক রং হবে উজ্জ্বল, পাশাপাশি আকার, আয়তন ও ঠিকঠাক থাকবে।
- বীজের মধ্যে যে কোন অপ্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন - বালি, পাথর, ছোট মাটি, ভাঙ্গা বীজ, বীজের খোসা ইত্যাদি না থাকাই শ্রেয়।
- বীজে হতে হবে সব দিক থেকে বিশুদ্ধ।
- অনেক সময় বীজের মধ্যে ক্ষতিকর আগাছার বীজ থাকে যা উন্নত বীজ হিসেবে পরিগনিত হয় না।
- বীজ পুষ্টি কর হবে । অর্থাৎ, আকার, আয়তন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন, জাত অনুযায়ী যা থাকা উচিত তাই থাকতে হবে।
- নীরোগ বীজ সব সময় ই গ্রহণ যোগ্য।
- বিশেষ দরকারে বীজের সুপ্তাবস্থা কাটানোর ব্যবস্থা করে ওই বীজ কাজে লাগাতে হবে।
- সর্বোপরি প্রতিটি বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতার একটি নির্ধারিত মান রয়েছে। এই মান ঠিকঠাক থাকা দরকার।
মোট ছয়টি বিষয় বীজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা দরকার। সেগুলি হল -
১. বংশগত বিসুদ্ধতা : বীজ যে জাতের সে জাতের অর্থাৎ, আকার, আয়তন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন, জাত অনুযায়ী যা থাকা উচিত তাই থাকতে হবে।
২. মিশ্রণ ছাড়া এক জাতের বীজ : ভালো বীজ অবশ্যই সব ধরনের মিশ্রণ মুক্ত হতে হবে অর্থাৎ মিশ্রণ ছাড়া এক জাতের বীজ হতে হবে। একটি ভালো বীজে যে কোনও রকমের জড় পদার্থ, আগাছার বীজ বা অন্য ফসলের এমনকি একই ফসলের অন্য জাতের মিশ্রণ থাকা চলবে না।
৩. নীরোগ ও কীটপতঙ্গ আক্রমনের থেকে মুক্ত : উত্তম মানের বীজ অবশ্যই রোগ জীবাণুমুক্ত এবং যে কোনও কীটপতঙ্গ আক্রমনের থেকে মুক্ত হবে। যে কোনও রোগ থাকলে বা কোনও পোকা আক্রমন করে থাকলে সেই বীজ কাজের উপযুক্ত নয়।
৪. অংকুরোদগমের মান : ভালোবীজ মানেই অংকুরোদগম হওয়ার ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকবে। সাধারণত ভালো মানের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা হয় ৮৫% এর ওপরে।
৫. বীজের আর্দ্রতা : উত্তম মানের বীজের আর্দ্রতা ঠিকঠাক থাকবে। যেমন ধান ও গমের ক্ষেত্রে আর্দ্রতার পরিমাণ ধরা যেতে পারে সর্বোচ্চ ১২% এবং অন্যান্য ফসলের বেলায় সর্বোচ্চ ১০% ।
৬. বীজের আয়তন: একটি নির্দিষ্ট ফসলের একই জাতের সব বীজ প্রায় একই আকারের হয়। এককথায় বলা যায়, একই জাতের সব বীজ এর পরিপূর্ণ আকার যেমনটা হওয়া উচিত তেমনটাই থাকবে।
কথায় আছে, ভালো বীজ মানেই ভালো ফসলের দিকে প্রথম ধাপ। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলি খেয়াল করে বীজ নির্বাচন করলে ফসল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং তার হাত ধরেই কৃষক, কৃষি ব্যবস্থা ও সর্বোপরি দেশ ও দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে পারে।