ব্রেকিং নিউজ

img/news-single-img/post-img-01.jpg

গ্লোবালাইজেশন পরবর্তী পৃথিবীতে মানুষের পছন্দ, চাহিদা নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। নানা নতুন নতুন জিনিস এখন মানুষ বাজারে খোঁজে৷ তার এলাকায় হয়ত সে জিনিস অত প্রচলিত ছিল না কিন্তু ডিজিটাল দুনিয়ায় বা অন্য কোনোভাবে সে সেই জিনিসের হদিস পেয়েছে, এখন সেই জিনিসই তার স্থানীয়িভাবেও চাই৷ এভাবেই ডিম্যান্ডের উপর ভিত্তি করেই শুরু হয় নানা নতুন নতুন জিনিসের উৎপাদন। এভাবেই আমাদের রাজ্যে চালু হয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের ব্যবসা৷

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এখন এক শিল্পের পর্যায়ে উন্নিত হয়েছে

সরাসরি মাঠ থেকে ফসল, সবজি বা মাছ মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা কিংবা তা থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণ রান্না করা খাবার তৈরি করা ও তাকে নানা রাসায়নিক ইত্যাদি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত করার ব্যবস্থা করার শিল্পের নামই হল খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। ফল, দুগ্ধজাত দ্রব্য, কেক বিস্কুট ইত্যাদিও এই শিল্পের আওতায় এসেছে৷

আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এই শিল্প ক্রমশ উন্নত ও জনপ্রিয় হয়ে চলেছে৷

 

প্রথমত, বাংলা যেহেতু কৃষিপ্রধান রাজ্য এবং সাথে রয়েছে প্রচুর জলাসয় ও গ্রামে গঞ্জে ঘরে ঘরেগৃহপালিত পশু হিসেবে গোরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি পোষা হয় - তাই এই রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের না উন্নতি হওয়ার কারণ নেই।

 

বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য কাঁচামালের অভাব নেই

 

এছাড়াও, বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ধরনের ফল,শস্য ও মাছ চাষ করা হয় এবং পশু পালন করা হয়। ফলের চাল,ডাল, আটা,ময়দা, সুজি, ভোজ্যতেল, পাপড়, দুধ, ঘি, মাখন,পনির, ফলের রস, জ্যাম,জেলি, আচার প্রভৃতি খাদ্য উৎপাদনের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব হয়না।

 

জীবনযাত্রার মান ও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন

 

তাছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের সংখ্যা, মানুষের জীবনযাত্রার মান ও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন, যৌথ পরিবারের ভাঙন ও ছোট পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিজ্ঞাপনের প্রভাব প্রভৃতি কারণে এ রাজ্যের শহরাঞ্চলগুলিতে হিমায়িত খাবার,কৌটোজাত  খাবার, হালকা পানীয় ইত্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি ঘটছে।

 

সাথে মনে রাখতে হবে, অন্যান্য শিল্পের মতো খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতির জন্য উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন। কারণ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হলে জ্যাম,জেলি, আচার, বিস্কুট, কেক, কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রী অল্প সময়েবেশি পরিমাণে বাজারজাত করা যায়। এছাড়া টিভি, রেডিও, মোবাইল, ইন্টারনেট প্রভৃতি  যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম বিজ্ঞাপনের সাহায্যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ক্রেতার সংখ্যা বাড়িয়েদেয়।পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেহেতু উন্নত তাই এরাজ্যেরখাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি ঘটেছে।

 

সরকারি স্তরে ইতিবাচক পদক্ষেপ

 

সরকারও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উপর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। কর ব্যবস্থার সংস্কার, বিদেশিবিনিয়োগ, জমির উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ, লাইসেন্স প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি উদারনীতিএরাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

 

আমরা জানি, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয়জনঘনত্ব পূর্ণ রাজ্য, তাই এ রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পজাত দ্রব্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও এ রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণশিল্পজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা আছে । ফলে এরাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি ত্বরান্বিতহয়েছে।

 

এছাড়াও উপরিলিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও মূলধনের জোগান, দ্রুত নগরায়ন, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মহিলাদের  ক্রমবর্ধমান  পেশাগত নিযুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলিও এরাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতির অন্যতম কারণ।

 

এইসব কারণেই রাজ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে এই ব্যবসা।  কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনু্যায়ী সারা দেশের মোট এই শিল্পের ৭০% ই চায় পশ্চিমবাংলায় লগ্নি করতে৷

 

তাই পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশই ভারতবর্ষের মধ্যে এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরির শিল্পের এপিসেন্টার হয়ে উঠছে।

 

  • তথ্যসূত্র–আনন্দবাজারপত্রিকা

You Might Also Like

Our Newsletter

স্কিল নিউজ