কম সময়ে লক্ষ্মী লাভের নতুন দিশা মাছ চাষ
কথায় বলে 'মাছে ভাতে বাঙালি ' আর এই প্রবাদ যে কতটা সত্যি তা শুধু বাঙালিরা নয় সারা দেশের মানুষই জানেন।প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক পিস্ মাছ পাতে পড়লে তবেই সেই খাওয়া সার্থক হয় আমাদের এবং যুগ যুগ ধরে আমাদের বিভিন্ন রকম মাছের যোগান দিয়ে চলেছেন দেশের মৎসব্যবসায়ীরা। ঠিক ধরেছেন ,আজ আমরা মাছের চাষ নিয়েই কথা বলবো ও এই ব্যবসা করে কিভাবে কম সময় অর্থ লাভ করতেন পারেন সেই বিষয় আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।
মৎসচাষ হলো এমন একধনের ব্যবসা যেখানে মাছ বা অন্যান্য জ্বলজ প্রাণীর পালন ,উৎপাদন ও বিক্রয় করে মুনাফা করা হয়। ভারতবর্ষ মৎসচাষে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে এবং শুধুমাত্র মৎসশিল্পেই প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।ভারতের অর্থনীতিতেও মৎসচাষের ভূমিকা অনঃস্বীকার্য। ন্যাশনাল ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী দেশের জিডিপি তে (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট ) ১.০৭% অবদান রয়েছে এবং মৎস রপ্তানি করে প্রায় ৩৩৪.৪১ বিলিয়ন অর্থ দেশের লাভ হয়েছে। ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ,কেরালা ,অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাট থেকে বিদেশে সবচেয়ে বেশি মাছ রপ্তানি করা হয়। সুতরাং সহজেই অনুমান করা যায় যে আমাদের দেশে মাছচাষের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক ও জনপ্রিয়।
কিভাবে মাছচাষ শুরু করবেন
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়,মাছের ব্যবসাতেও তার ব্যতিক্রম নেই,চলুন জেনেনি সেই গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলি।
১)জমি বা এলাকা নির্বাচন - মাছ চাষের জন্য সমতল ও বড় জমি নির্বাচন করুন যাতে ভবিষ্যতে ফার্মের যাবতীয় কাজ একজায়গাতেই করতে পারেন। বন্যা প্রবন,দূষিত ,শস্যচাষের জমি ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন ,জলাশয় থেকে একটু নিচু এমন জমি বাছুন এবং পরিবহন ব্যবস্থা ভালো এমন জমিই এই চাষের পক্ষে ভালো।
২)ফার্ম বা খামারের ধরণ নিশ্চিত করুন -মাছচাষের ক্ষেত্রে তিন ধরণের ফার্ম করা যায় ,পুকুরে মাছ চাষ ,খাঁচায় মাছ চাষ ও ট্যাঙ্কে মাছচাষ। এরমধ্যে খাঁচায় মাছ চাষ করতে হলে উপযুক্ত খাঁচায় মাছ পালন করতে হয় কোনো পুকুর বা হ্রদে।
৩)পুকুর নির্মাণ - আপনার নির্বাচিত জমিতে পুকুর নির্মাণ করুন ,সবার আগে পুকুরের নকশা তৈরি করুন কারণ কোন প্রজাতির মাছ চাষ করবেন তা নিশ্চিত করে তবেই পুকুরের নকশা বানানো উচিত নাহলে লোকসান হতে পারে।
৪)মাছের প্রজাতি নির্বাচন - ব্যবসায় প্রথম থেকেই লাভ করার জন্য মাছের সঠিক প্রজাতি নির্বাচন প্রয়োজন। নতুন ব্যবসায়ীদের উচিত এমন মাছের প্রজাতি নির্বাচন করা যে মাছের চাহিদা বাজারে ভালো ও পালন করাও সহজ।
৫)চারামাছের যত্ন - জলাশয়ে মাছের চারা ছাড়ার পরে তাদের যত্ন ও দেখভালও করতে হয় ,অনেকসময় নতুন চাষিরা পুকুর বা ট্যাঙ্কের আয়তন না বুঝে অতিরিক্ত চারা ছাড়েন ফলে বহু চারা মাছ মারা পড়ে। সময় সময় জল পাল্টানো ,ওষুধ দেওয়া এগুলিও গুরুত্বপূর্ণ।
৬)মাছের খাদ্য - আপনার মাছের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবশ্যই উন্নতমানের কাবার ব্যবহার করুন ,প্রতিটি প্রজাতির মাছেদের জন্য বাজারে আলাদা আলাদা খাবার পাওয়া যায়।
৭)জলের গুনাগুন বজায় রাখা - মাছ চাষের অন্যতম প্রধান দিক হলো জলাশয়ের জল মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করা।
৮)মাছের ওজন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা - এই পদ্ধতিটি সবচেয়ে দরকারি ,চারা মাছ ছাড়ার পর সেই মাছেদের স্বাস্থ্য ও ওজন নিষদিষ্ট সময় পর পর পরীক্ষা করা উচিত। দরকারে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়াও ভীষণ জরুরি।
৯)বিক্রয়ের জন্য মাছ পরিবহন - মাছ বড় হলে তাকে জল থেকে তুলে বিক্রয়ের জন্য অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া একটা বিশেষ কাজ ,আপনার পরিবহন ব্যবস্থা অবশ্যই ভালো হতে হবে নাহলে ক্রেতার হাতে পৌঁছনোর আগেই মাছ খারাপ হতে পারে।
১০)মাছের প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা - মাছ প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতিটি বেশ জটিল ,তাই আপনাকে দক্ষ কারিগর নিয়োগ করতে হবে এই কাজের জন্য ,বিভিন্ন ধরণের মাছকে কেটে ,পরিষ্কার করে আলাদা পাত্রে বিধিসম্মতভাবে প্যাক করে সংরক্ষণ করার এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সাবধানতার সাথে করতে হয়।
মাছের ব্যবসায় কেমন লাভ হয় (এক বছরে )
এক বছরে একজন মাছের চাষ করে কত টাকা লাভ করতে পারেন সেটা অনেকটাই তার ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে।অর্থাৎ মাছ কোথায় চাষ করছেন(পুকুরে না ট্যাঙ্কে ) ,কত পরিমান চারা ছাড়ছেন ,মাছের খাবারের গুন্ ,জলের মাপ ও পরিচ্ছন্নতা এই সকল বিষয়ের ভারসাম্য থাকলে তবেই লাভের মুখ দেখতে পারেন।কেউ যদি এক একরে মাছচাষ করেন তাহলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরচাষের ক্ষেত্রে লাভের পরিমান ভিন্ন হতে পারে। যেমন -কৈ,সিঙ্গি মাগুর (৩ চক্রে )১২০,০০০-২২০,০০০/- , তেলাপিয়া,কাতলা (২ চক্রে) = ১০০,০০০-১২০,০০০/- ,পাবদা (১.৫ চক্রে) = ৮০,০০০-১০০,০০০/- । ব্যক্তি বিশেষে এই হিসেবের তারতম্য অবশ্যই হতে পারে। (https://bn.quora.com )
মাছের ব্যবসাতেও অন্য ব্যবসার মতোই সময় ও ধৈর্য দিতে হয়।এই কাজে লাভের সাথে লোকসানও হতে পারে এবং যখন আপনি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন তখন সবরকম সম্ভাবনার কথাই বিবেচনা করা উচিত। ভারতবর্ষে ৪০ লক্ষ্য মৎসজীবি আছেন যারা সাফল্যের সঙ্গে মাছচাষ করে মুনাফা করছেন। তাই যদি আপনি ব্যবসা করে কম সময়ে লাভ করতে চান তাহলে আজই মাছচাষের কথা অবশ্যই বিবেচনা করতে পারেন।