ফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে এই দক্ষতা গুলি আপনার থাকতেই হবে
আমাদের দেশে নানারকমের বিকল্প জীবিকার সুযোগ বাড়ছে। এমন এমন কিছু কাজ যেগুলিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেওয়া যায় বলে কখনও মনে করারই সুযোগ পায়নি আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম সেগুলি এখন অন্যতম আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। সবচেয়ে আশার যে বিষয় তা হল, নানা ক্রিয়েটিভ কাজকে, ভালোলাগার কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ আসছে হাতের সামনে। প্যাশনকে পেশায় পরিণত করতে পারার সৌভাগ্য এই প্রজন্মের সামনে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ বাস্তব বলে, নিজের পছন্দের কাজকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ হলে নিজের প্রতিভাকে এক্সপ্লোর করার এবং নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতার ইচ্ছে জন্মায় যা জন্ম দেয় আরও ভালো কাজ।
এইসময়ের এমনই এক জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে ফ্যাশন ডিজাইনিং
বহু মানুষ এই পেশার সাথে নিজেকে যুক্ত করছে। অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত তারকাদের পোশাক যে ডিজাইনাররা তৈরি করেন স্বাভাবিকভাবে তারাও লাইমলাইটে থাকেন। প্রচার ও রূপোলি দুনিয়ার আলোর এই জোড়া ঝলকানিও এই পেশার প্রতি তরুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করছে।
কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাইলেই কি আর তা হওয়া যায়? রীতিমত প্রথাগত পড়াশোনা শিখেই এই বিষয়ে এগোতে হয়। যে কোনো বিষয় নিয়েই প্রাথমিকভাবে পড়াশোনা থাকলেও ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে আপনাকে লেখাপড়া করতেই হবে। প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ এখনও তেমন তৈরি না হলেও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে এই পড়াশোনার সুযোগ হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয় অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় কিছু বেশিই হয়৷ নানা ধরণেরডিপ্লোবা বা সার্টিফিকেট কোর্সের ব্যবস্থাও আছে। তারপর করা যেতে পারে ইন্টার্নশিপও। যেখানে হাতে কলমে শেখার সুযোগও পাওয়া যায়৷
স্বতস্ফূর্ত শিল্প ও নান্দনিক বোধ থাকা দরকার
কিন্তু যতই প্রথাগত শিক্ষা থাক, স্বতস্ফূর্ত শিল্প ও নান্দনিক বোধ না থাকলে এই ক্ষেত্রে এগোনো যাবে না। সৌন্দর্য্য বিষয়টি আপেক্ষিক, তবে সৌন্দর্য্যবোধ সম্পর্কে বেসিক ধারণা না থাকলে এই পেশায় সফল হওয়া মুশকিল। ছোট থেকে আঁকা বা ঐ জাতীয় কোনো শিল্পের সাথে সংযোগে থাকলে সুবিধে পাওয়া যায়।
টেকনিকালি দক্ষ হতে হবে
এরপর আপনাকে টেকনিকালি দক্ষ হতে হবে। কম্পিউটার ও নিত্যনতুনটেকনোলজির সাথে নিজেকে আপটুডেট হতে হবে। Adobe Illustrator, Adobe Photoshop, AutoCAD, Corel Draw ইত্যাদি সফটওয়্যার আপনাকে গুলে খেতে হবে। কারণ আজকের দিনে স্যাম্পেল তৈরি ও দেখানোর মাধ্যম বেশিরভাগই ডিজিটাল। এইসব সফটওয়্যারেই সমস্ত ডিজাইন তৈরি করতে হবে।
যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে
কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি আপনাকে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারার ক্ষমতা থাকাও জরুরি। তবেই বাজারে আপনার সম্পর্কে ভালো রেপুটেশন তৈরি হবে।
সৃজনশীল পেশা হওয়ার কারণে কাজের পোর্টফোলিও থাকা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনার আঁকাআঁকি ও ডিজাইনের দক্ষতা সম্পর্কে নিয়োগদাতা খুব সহজে পরিষ্কার ধারণা পাবেন। কাজ পেতে সুবিধে হবে।
খোঁজ রাখতে হবে ফ্যাশন ট্রেন্ড
খোঁজ রাখতে হবে দুনিয়া জুড়ে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে কোথায় কি ঘটছে। কোনটা কখন ট্রেন্ড চলছে। তা অ্যানালাইসিস করেই তৈরি করতে হবে নিজের ডিজাইন। স্বকীয় ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের মাধ্যমে নিজের একটি ব্র্যান্ডভ্যালু তৈরির দিকে ধীরে ধীরে নজর দিতে হবে। একটি নিজস্ব স্টাইল তৈরি করা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত দরকার যার সাহায্যে যে কোনো কাজেই আপনার নিজস্ব একটি সিগনেচারটাচ খুঁজে পাওয়া যায়।
শরীরের মাপ ও মানবশরীরের গঠন সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হতে হবে। সকলের চেহারার আদলও একরকম হয় না। সেই সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। কারণ সুন্দর ডিজাইনের সাথে সাথে আপনার কাস্টোমারকে আরামদায়ক ফিটিংস দিতে পারাটাও আপনার দায়িত্ব।
ধৈর্য সহকারে আপনার উপভোক্তার কথা শুনে তিনি কি চাইছেন তা বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকা দরকার। তারপর সেই একই ধৈর্য্য নিয়েই নিঁখুতভাবে কাজ শেষ করার মুনশিয়ানা থাকা প্রয়োজন।
এইসব দক্ষতা ও গুণ আপনার মধ্যে যত বেশি থাকবে, পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি ততই সফল হতে পারবেন। এই কথা ঠিক, এখনও আমাদের দেশে ফ্যাশন ডিজাইনিংকেরিয়ার হিসেবে খুব আরামদায়ক বা স্টেবল নয় তবে এই প্রজন্মের তরুন তরুণীদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নেওয়া এবং অ্যাডভেঞারের যে স্বাভাবিক ঝোঁক থাকে তাকে জল হাওয়া দিতে পারে এই পেশাই।