পরিচালক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে ? তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্যই
শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎ রায়ের এই বিখ্যাত উক্তি "পরিচালকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভালোভাবে জানেন যে চলচ্চিত্রটি কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছে।" দুনিয়ার প্রায় সকল পরিচালক বা ভবিষ্যৎ পরিচালকদের বছরের পর বছর অনুপ্রাণিত করে চলেছে। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে অজস্র চিত্র পরিচালক মানুষকে নিজেদের ছবির মাধ্যমে আনন্দ ,দুঃখ ,ভালোবাসা ,বেদনা ,শিক্ষা ,অনুপ্রেরণা সব রকম অনুভূতি দিয়ে চলেছেন ,তার মধ্যে কিছু ছবি মানুষ ভুলে যান আবার কিছু ছবির প্রভাব থাকে আমৃত্যু। ভালো খারাপ যেমনি হোক না কেন ,মানুষের জীবনে সিনেমার মাহাত্ম শুধু বেড়েই চলেছে আর সেই সাথে মানুষের মধ্যে বেড়েছে এই সৃষ্টির সাথে যুক্ত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তি।
গত কয়েক দশক জুড়ে নব প্রজন্মের মধ্যে চিত্র পরিচালক হওয়ার প্রবণতা অনেকবেশি দেখা গেছে ,আগে বেশিরভাগ কম বয়সী ছেলে মেয়েরা সিনিমার সাথে অবশ্যই যুক্ত হতে চাইছেন কিন্তু শুধুমাত্র অভিনয়ের দিকেই তাদের ঝোক বেশি ছিল ,এখন সেই প্রবণতা অনেক কম ,এখন নতুন প্রজন্মের অনেকেই সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি ,পরিচালনা ,চিত্র গ্রহণ ,এডিটিং বা সম্পাদনা ,কাস্টিং বা চরিত্র বাছাই ,মেকাপ ,লাইট ও সাউন্ড প্রভৃতি কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছে।
কয়েক দশক আগেও ভারতীয় সমাজের প্রাচীন মানসিকতার কারণে সিনেমার সাথে যুক্ত হাওয়াকে বেশিরভাগ পরিবারেই ভালো চোখে দেখা হতো না ,কিন্তু সময়ের পালা বদলে এখন প্রতিটি শিক্ষিত পরিবারই তাদের সন্তানকে যে কোনো শিল্পের সাথে যুক্ত হওয়াকেই ভালো চোখে দেখেনএবং চিত্র পরিচালনা বর্তমান যুগে বেশ সম্মানের কাজ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তবে এই প্রতিযোগিতার যুগে ভালো পরিচালক হতে বা সিনেমা সংক্রান্ত যে কোনো কাজের সাথেই যুক্ত হতে গেলে দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পথপ্রদর্শন।
এখানে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে ভারতের স্বনামধন্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় ,মৃনাল সেন ,হৃত্তিক ঘটক বা শ্যাম বেনেগাল এনাদের কারুরই প্রথাগত চিত্র পরিচালনার শিক্ষা ছিল না তাও এনারা বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন তাহলে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন কি ? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে এনারা প্রত্যেকেই ব্যতিক্রম ,এনাদের মতো গুণী ও অসম্ভব সৃষ্টিশীল মানুষ কজন হতে পারেন ? এনারা আমাদের অনুপ্রেরণা ও প্রাতঃস্মরণীয় ,এনারা হলেন বর্তমান চলচিত্র জগতের পথিকৃৎ ,এদের অনুসরণ করেই পরবর্তী প্রজন্ম সিনেমাকে ভালোবাসতে শিখেছে ও আমরা আরো অনেক গুণী শিল্পীদের পেয়েছে তাই তাদের সাথে নিজেদের তুলনা না করে নিজেদের যোগ্য করে তোলাই আমাদের উচিত।
সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে চলুন দেখা যাক কিভাবে পরিচালক হিসেবে একজন ব্যক্তি চলচিত্র জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
চিত্র পরিচালক হওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি
ভিন্ন ধরণের ও ভিন্ন ভাষার সিনেমা দেখার অভ্যাস করুন - ভালো পরিচালক হতে গেলে প্রথম কাজ যেটা করতেই হবে সেটি হলো প্রচুর সিনেমা দেখার অভ্যেস ,আপনি যত বেশি সিনেমা দেখবেন তত বেশি আপনার এই সংক্রান্ত জ্ঞান বাড়বে ,শুধু তাই নয় ভিন্ন ধরণের ও ভাষার সিনেমা দেখতে হবে ,এতে আপনি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও বিভিন্ন চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হবেন।
প্রচুর চিত্রনাট্য পড়ুন ও লিখুন - এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ,প্রচুর চিত্রনাট্য পড়লে তবেই আপনি নিজের পছন্দের চিত্রনাট্য লিখতে পারবেন একদিন ,তাই আজই পড়া ও লেখার কাজ শুরু করে দিন।
বাইরে বেরোন এবং লোকজনের সাধারণ জীবন যাপন লক্ষ্য করুন - একজন ভালো চিত্র পরিচালক হতে গেলে সবার প্রথমে আপনাকে একজন ভালো পর্যবেক্ষক হতেই হবে ,বাড়িতে বসে থাকলে এই কাজ কখনোই সম্ভব নয় , যতক্ষণ না আপনি বাইরে বেরিয়ে মানুষের সাথে মিশছেন ও তাদের জীবনযাত্রাকে ভালো করে লক্ষ্য করছেন আপনি কখনোই কাঙ্খিত উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন না।
শর্ট ফিল্ম বানান - একটি পূর্ণ দৈর্ঘের সিনেমা বানাতে গেলে যে অভিজ্ঞতা লাগে তা পেতে হলে আপনাকে আগে অনেকগুলি শর্টফিল্ম বা স্বল্প দৈর্ঘের সিনেমা বানাতেই হবে ,এর থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ,জ্ঞান আপনাকে নিজের সিনেমা বানাতে সাহায্য করবে।
ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যোগদান - পরবর্তী ধাপটি হলো বিভিন্ন ছোট বড় ফিল্ম ফেস্টিভালে যোগদান করা ,এতে আপনার তৈরী শর্টফিল্ম গুলো প্রচার পাবে ও আপনিও অন্যান্য ভালো ডিরেক্টর দের কাজ দেখার সুযোগ পাবেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এই সব ফেস্টিভাল জিতলে বড় ব্যানার গুলি কাজের সুযোগও করে দেয়।
ফিল্ম পাড়ায় যাওয়া আসা - এই কাজটি সবচেয়ে দরকারি,সিনেমার লোকজন দের সাথে যোগাযোগ আপনাকে রাখতেই হবে ,এতে আপনার কাজ পেতে সুবিধা হবে , সিনেমা পাড়ায় যদি আপনি একজন পরিচিত মুখ হন তবেই কেউ আপনাকে কোনো কাজের জন্য ডাকার কথা ভাববেন ,তাই যোগাযোগ এই কাজে খুবই প্রয়োজন।
সহ পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ - একজন নামি পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করা একটা ভালো পদক্ষেপ ,এতে আপনি সিনেমা জগতের লোকজনের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েন এবং কাজের অভিজ্ঞতার সাথে সাথে পরিচিতিও বাড়ে। বর্তমান যুগের বহু নামি পরিচালক যেমন -সৃজিত মুখার্জি ,বিরসা দাসগুপ্ত ,বলিউডে কারণ জোহার ,অনুরাগ কাশ্যপ এনারা প্রত্যেকেই সহপরিচালক হিসেবেই নিজেদের পরিচালক জীবন শুরু করেছিলেন।
থিয়েটার পরিচালনা - সিনেমার মতো থিয়েটার ও একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম ,সরাসরি সিনেমায় কাজ করার আগে থিয়েটার পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থাকে তা আখেরে আপনার কাজেই লাগবে ,যদিও সিনেমা ও থিয়েটার সম্পূর্ণ অন্য ধারার দুটি অভিনয় জগৎ কিন্তু এখানে কাজ শেখার পর সিনেমা বানানো আরো সহজ হবে বলেই গুণী জনেরা মনে করেন।
একজন ভালো পরিচালক হওয়ার জন্য আপনাকে সুদীর্ঘ্য পথ পেরোতে হতে পারে কিন্তু আপনার প্রতিভা ,পরিশ্রম,একাগ্রতা ও অধ্যাবসায় আপনাকে অবশ্যই একদিন শ্রেষ্ট আসনে বসাবে তাই এগিয়ে চলুন ,আশা করা যায় এই প্রতিবেদন আপনাকে আপনার লক্ষ্যের পথে এগোতে সাহায্য করবে।