ডেয়ারি ফার্মিং - জানা অজানার সাতকাহন
'পুরাকালে গোপালন, পশুপালন ও কৃষিকাজ ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা ' এই কথা ছোটথেকেই আমরা পড়ে এসেছি। তবে, এই কথার মর্মার্থ বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়।ডেয়ারি ফার্মিং বা গব্যোৎপাদন কে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর অন্যতম ভিত্তি বললে কিছু কম বলা হবেনা। আগের যুগে গবাদি শুধুমাত্র গৃহপালিত পশু হিসেবেই বিবেচিত হতো কারণ পূর্বে মানুষের মুখ্য জীবিকা ছিল কৃষিকাজ এবং তার জন্য প্রয়োজন ছিল গরু,বলদ বা মহিষের ,এবং সেই সঙ্গে তাদের থেকে প্রাপ্ত দুধ ও বিষ্ঠা ছিল অতিরিক্ত পাওনা।পরবর্তীকালে যখন মানুষ গরুর দুধ ও দুগ্ধজাত অন্য উৎপাদন যেমন ঘি ,মাখন,দই,ছানা ইত্যাদিকে ব্যবসায়িক লাভের জন্য ব্যবহার করতে লাগলো তখন থেকেই গব্যোৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ জীবিকা বা ব্যবসায় পরিণত হয়ে উঠলো।
ডেয়ারি ফার্মিং অতি প্রাচীন জীবিকা হলেও এই বিষয়ে আমাদের বেশিরভাগ মানুষেরই তেমন জ্ঞান নেই ,নিত্যদিনের সঙ্গী দুধ,ঘি,মাখন ,চিজ এগুলির উৎপাদন সম্পর্কিত কোনোকিছুর সম্বন্ধেই আমাদের ন্যূনতম ধারণাও নেই তাই আসুন জেনে নি ডেয়ারি ফার্মিংয়ের জানা অজানা কিছু তথ্য।
ভারতে হোয়াইট রেভেল্যুশন বা অপারেশন ফ্লাড
১৯৭০ সল্ ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত ,তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো অপারেশন ফ্লাড বা হোয়াইট রেভল্যুশন। এই বিপ্লবের জনক ছিলেন ডক্টর ভার্গিস কুরিয়েন। এই হোয়াইট রেভল্যুশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতে দুগ্দ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদনের জন্য সাবলম্বী করা ও দুগ্দ্ধ উৎপাদক সকল পশুদের জন্য আলাদা ও সুগঠিত ফার্ম বা ক্যাটেল এর প্রবর্তন করা।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ভারত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে এবং গোটা দেশের ২২ টি রাজ্যে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ কৃষক আনুমানিক প্রায় ৩০০ টি ডেয়ারি ফার্মে দৈনিক ২ কোটি লিটার দুগ্ধ উৎপাদন করছেন।ভারতে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে প্রথম সারিতে রয়েছে ৫ টি রাজ্য ,সেগুলি হলো উত্তর প্রদেশ ,রাজস্থান ,মধ্যপ্রদেশ ,অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গুজরাট। ভারতের নামি ডেয়ারি ফার্ম গুলি হলো আমূল ,মাদার ডেয়ারি ,নন্দিনী মিল্ক কর্ণাটক মিল্ক ফেডারেশন ,দুধসাগরে ডেয়ারি মেহসানা গুজরাট ,ডায়নামিক্স ডেয়ারি মহারাষ্ট্র ও অভিন মিল্ক তামিল নাড়ু প্রভৃতি। (তথ্য সূত্র :উইকিপিডিয়া )
ডেয়ারি ফার্মিংয়ের জানা অজানা কিছু তথ্য
১) ১৯৭০ সালে অপারেশন ফ্লাড বা হোয়াইট রেভলুশন হওয়ার পরে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড স্থাপিত হয় যার দ্বারা ভারতে ডেয়ারি ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করা সম্ভব হয়।
২) ভার্গিস কুরিয়েন যিনি ভারতে দুধ বিপ্লবের জনক তিনিই আবার ভারতে প্রথম মোষের দুধ থেকে গুঁড়ো দুধ তৈরির জন্য গবেষণা করেন এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের প্রথম মিল্ক পাউডার ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন যার উদ্বোধন স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহেরু করেছিলেন।
৩) ভারতের ডেয়ারি ইন্ডাস্ট্রিতে অবদানের জন্য ভার্গিস কুরিয়েন এর জন্মদিন ২৬ নভেম্বর ন্যাশনাল মিল্ক ডে হিসেবে পালিত হয়।
৪) ভারতে ডেয়ারি ফার্মিং শুরু করতে গেলে একজন ব্যক্তির কম করে ৪ হাজার বর্গ ফুট স্থান প্রয়োজন অন্তত ২০ টি গবাদি পশুর জন্য।
5) কি ধরণের ডেয়ারি প্রোডাক্ট বা দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসা করতে চান সেই অনুযায়ী গবাদি পশুর বংশ বা জাত নির্বাচন করতে হয়।
৬ ) ব্যবসায়ীর আর্থিক বিনিয়োগের সামর্থ অনুযায়ী ফার্মের আয়তন ও কর্মী সংখ্যা নিশ্চিত করতে হয়।
৭) ডা. কুরিয়েনের দুধ বিপ্লব নিয়ে মন্থন ছবিটি তৈরি করেছিলেন পরিচালক শাম বেনেগল।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য বন্ধু হলো এই দুগ্দ্ধপণ্য কিন্তু আমরা অনেকেই এর ইতিহাস জানি না তবে আশাকরা যায় এই প্রতিবেদন আমাদের সকলকে ডেয়ারি ফার্মিংয়ের গৌরবান্বিত ইতিহাস ও বর্তমান পথ চলা কে জানতে ও ভাবতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র : https://powergotha.com/en/dairy-farming-in-india এবং https://www.dairyglobal.net/