জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে কলাই জাতীয় ডাল চাষ
দেশজুড়েই কৃষিকাজে মন্দা চলছে। ফলনের পরিমাণ না কমলেও বাজারের অর্থনীতি স্থিতিশীল না থাকায় ফসলের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকদের মধ্যেও বাড়ছে অসন্তোষ। অন্যদিকে ক্রমাগত রাসায়নিক সারের ব্যবহার জমির স্বাভাবিক উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে। তাই খোঁজ চলছে সর্বত্র কিভাবে কৃষি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কিভাবে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। চাষিরাও খুঁজছেন কোন ফসল ফলালে জমিও ভালো থাকবে সাথে আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রশ্নে নানারকম গবেষনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন। বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন কিন্তু আমাদের হাতে পুরোনো হলেও এমন ধারালো অস্ত্র আছে যার সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তা হল ডাল শষ্য উৎপাদন। ডাল হল এমন একটি খাবার যা ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্তেই প্রায় মানু্ষ পছন্দ করেন। আমাদের দেশে যেহেতু গরিব নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি আর গরিব মানুষের কম পয়সায় পেট ভরার জন্য ডাল অপরিহার্য। আর এই ডাল শষ্য জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে কলাই জাতীয় ডাল।
সমস্ত ডালশস্য চাষের পর জমিতে বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি নাইট্রোজেন (১৩-১৭ কেজি ইউরিয়ার সমান) মাটিতে যুক্ত হয়। কারণ ডালশস্যের শিকড়ে গুঁটির মধ্যে থাকা রাইজোবিয়াম জীবাণু বাতাসের নাইট্রোজেন শোষণ করে গাছকে দেয় এবং বাকিটা মাটিতেই জমা হয়। তাতে পরবর্তীতে অন্য চাষ করতে সুবিধে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন বছরে যতগুলো চাষ হয় জমিতে, তার মধ্যে এক বার অন্তত ডালশস্য চাষ করা উচিৎ। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে। তবে, শুধু অর্থকরী কারণেও ডাল চাষ করা যায়। কারণ আমাদের রাজ্যে ডালশস্যের যা চাহিদা, তার মাত্র ১৯-২০ শতাংশ উৎপাদন হয়। তাই ডাল চাষ করে লোকসান হয়েছে, এমনটা বিশেষ শোনা যায় না। বসন্ত ঋতুতে অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ডালশস্য হিসাবে মুগ ও কলাই চাষ করা যায়। এই দু’টি ফসল বর্ষাকালেও চাষ হয়। কিন্তু এই সময় চাষ করলে ফলন বেশি হয়। কলাইয়ের চাহিদা বাংলার বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যেই রয়েছে।
আর ডাল চাষে জমির উর্বরতা আরও বৃদ্ধি পায় কারণ এই চাষে বেশিরভাগটাই জৈব সার ব্যবহার করা হয়। জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ৫ কুইন্ট্যাল জৈব সার প্রয়োগ করলে ভাল হয়। রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা যায় তবে তার আগে মাটি পরীক্ষা করা দরকার। তবে, তাতে মাটির রমণ ক্ষমতা কমে তাই জৈব সারের দিকেই ঝুঁকে থাকেন কৃষকেরা। নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। মুগ ও কালো কলাইয়ের ক্ষেত্রে মাপটা এ রকম— বিঘা প্রতি ৫.৫ কেজি ইউরিয়া, ৪০ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ৪.৫ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ মূল সার হিসাবে শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আলুর পরে মুগ বা কলাই চাষে বিঘা প্রতি ৩৩ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিন।
আর এই কলাই চাষে আয়ের হারও বেশ ভালো। কলাই ডাল চাষ করলে বিঘা প্রতি গড়ে ১৪০-১৬০ কেজি ফলন পাওয়া সম্ভব। আর তাতে কমপক্ষে ৩৫০০-৪০০০ টাকা লাভ। যা এই সময়ে দাঁড়িয়ে বেশ ভালো । আবার সমস্ত ডালশস্য চাষের পর জমিতে বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি নাইট্রোজেন (১৩-১৭ কেজি ইউরিয়ার সমান) মাটিতে যুক্ত হয়। কারণ ডালশস্যের শিকড়ে গুঁটির মধ্যে থাকা রাইজোবিয়াম জীবাণু বাতাসের নাইট্রোজেন শোষণ করে গাছকে দেয় এবং বাকিটা মাটিতেই জমা হয়। তাতে পরবর্তীতে অন্য চাষ করতে সুবিধে হয়। এই সমস্ত দিক মাথায় রেখে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ এই রাজ্যের সমস্ত কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে ডাল চাষ বা বিশেষ করে কলাই মুগ ইত্যাদি ডাল চাষে বিশেষ উৎসাহ দিচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওয়েবসাইট ও আনন্দবাজার পত্রিকা